চলচ্চিত্র নির্মাতারা কি তাহলে সুখবর পেতে যাচ্ছেন। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি- ‘চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসির নানা সেবার অযৌক্তিক বেশি ভাড়া কমাতে হবে। একই সঙ্গে ভাড়া দেওয়ার পরও সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি অর্থ যাতে দিতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়তি অর্থ না দিলে দিনের পর দিন ফাইল পড়ে থাকে। সহজে সেবা মেলে না।’ গত কয়েক বছর ধরে নির্মাতাদের এ দাবি এফডিসি কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি মেনে নেয়নি। ফলে নির্মাতারা বাধ্য হয়ে বাইরে প্রাইভেট সেক্টরে গিয়ে কম ভাড়ায় সেবা নিতে শুরু করেন। মূলত এর ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের এ সরকারি সংস্থাটি। কারণ এফডিসি হয়ে পড়ে কর্মশূন্য। আর কাজ না থাকায় মাসের পর মাস এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে। শুরু হয় তাদের মানবেতর জীবনযাপন। কারণ এফডিসির আয় দিয়ে সংস্থার সব ব্যয় নির্বাহ করতে হয়।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৭ আগস্ট এফডিসির নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বণিককে। অবশেষে এ নতুন এমডির সঙ্গে সেবার ভাড়া কমানোর বিষয়ে চলচ্চিত্র সমিতির কর্তাব্যক্তিরা আলোচনা-বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করলে এমডি সাদরে তাদের আমন্ত্রণ জানান। এতে গত ২২ সেপ্টেম্বর এফডিসির এমডির সভাকক্ষে এমডির সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী, চিত্রাগ্রাহক সমিতি ও এডিটরস গিল্ডের কর্মকর্তারা।
বৈঠকে এফডিসির এমডি ধৈর্য সহকারে সবার কথা শোনেন এবং তাদের দাবি যৌক্তিক হিসেবে গণ্য করে এফডিসি ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে চলমান অচলাবস্থা দূরীকরণে উদ্যোগ নেন। এফডিসির এমডির পক্ষে সংস্থার পিআরও হিমাদ্রী বড়ুয়া জানান, চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিটি সেবার ভাড়া কমানোর জন্য একটি লিখিত তালিকা আমাদের কাছে দিয়েছেন। আমরা এখন এটি যাচাইবাছাই করছি। আমরা আসলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সময়োপযোগী করে সেবার ভাড়া কমানোর পক্ষে। চলচ্চিত্রকারদের তালিকা যাচাই বাছাইয়ের পর এ ব্যাপারে একটি খসড়া ভাড়ার তালিকা তৈরি করে তাদের দেব। তারা এতে একমত হলে বা তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা সংযোজন-বিয়োজন করে খসড়াটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করব। সেখান থেকে সেটি ফেরত আসার পর এফডিসি বোর্ডের মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে প্রজ্ঞাপন আকারে তা প্রকাশ করা হবে। আশা করছি দীর্ঘদিন পরে হলেও এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রনির্মাতা ও এফডিসির স্বার্থ সংরক্ষণ হবে এবং দুপক্ষই এর সুফল পাবে।
এদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাতাদের দাবি উপেক্ষা করে এফডিসি কর্তৃপক্ষ চলচ্চিত্র নির্মাণের সব সেবার ভাড়া অযৌক্তিক হারে বেশি নিয়ে আসছে। শুধু ভাড়াই নয়, এখানে সেবা নিতে গেলে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অন্যায় আবদার পূরণ করতে না পারলে সেবা পেতে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। এতে এফডিসি কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার আগের ভাড়ার তালিকা উপস্থিত চলচ্চিত্রকারদের সামনে তুলে ধরে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে বাইরের প্রাইভেট সেক্টরের সেবার ভাড়ার সঙ্গে তুলনা করে নতুন একটি ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করলে এফডিসি কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। এখন তারা সেটা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করলে নির্মাতাদের এফডিসিতে কাজ করতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমি আশা করছি এফডিসি কর্তৃপক্ষ অচিরেই এ প্রজ্ঞাপন জারি করবে এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার খ্যাত এফডিসি চলচ্চিত্র নির্মাণে আবার সরব হয়ে ওঠবে। আমরা এফডিসি কর্তৃপক্ষকে এ কথাও জানিয়েছি যে, বাইরে কম খরচে কাজ করতে গিয়ে নির্মাতারা স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছেন বটে কিন্তু চলচ্চিত্রকার ও তারকাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সেখানে ঝুঁঁকির মধ্যে থাকে। একমাত্র এফডিসিই হলো চলচ্চিত্র নির্মাণের নিরাপদ স্থান। তাই আমরা এখানে কাজ করতে চাই এবং এ জন্য সেবার ভাড়া যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করা জরুরি।
এদিকে বেশ কিছু নির্মাতা বলছেন, এফডিসিতে কাজ করতে গিয়ে সেবার বেশি ভাড়া গোনাসহ নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয়। কিন্তু বাইরে প্রাইভেট সেক্টরে কাজের ক্ষেত্রে খরচতো কম পড়েই, পাশাপাশি তাদের আদর আপ্যায়নের কারণে আমরা সেখানে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কিন্তু চলচ্চিত্রকারদের দ্বিতীয় আবাসস্থল খ্যাত এফডিসি যদি আমাদের চাহিদামতো আরামে কাজ করার সুযোগ করে দেয় তাহলে নিজেদের ঘর ছেড়ে আমাদের বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।