নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী আজ। তাঁর পরিচালিত নাটক-চলচ্চিত্রের নিয়মিত মুখ হিসেবে রঙিন ভুবনে সুপরিচিত এজাজুল ইসলাম। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, নির্মাতা, গীতিকবি ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এ তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী। তাঁর সঙ্গে অনেক কাজের স্মৃতি রয়েছে, কিছু কথা জানতে চাই।
নির্মাণের নানা কাজেও স্যার আমার ওপর ভরসা রাখতেন। শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় দেখি স্যারের ঠিক করা লোকেশনে গিয়ে শুটিং সম্ভব না। কিন্তু ‘স্যার’কে বলতেও পারছিলাম না ব্যাপারটা। তাই তাঁকে দুশ্চিন্তায় না ফেলে মুহূর্তের মধ্যেই শুটিং লোকেশন ঠিক করে ফেলি। আমার কাজে অবাক হয়ে স্যার তখন ‘গুড জব ডাক্তার’ বলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাহবা দিয়েছিলেন। আবার নুহাশ পল্লীর জন্য জায়গা দেখতে গিয়ে এক রিকশায় স্যারের সঙ্গে গ্রামের রাস্তায় চলার কথা ভুলিনি। সেদিনই প্রথম জেনেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে স্যার অনেক পছন্দ করতেন। সেদিন খাবার তালিকায় ইলিশ মাছ দেখে দারুণ খুশি হয়েছিলেন স্যার। আর স্যারকে খুশি করা খুব সহজ ছিল। শুটিং চলাকালীন বা শুটিং শেষে একই রকম মানুষ ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সব সময় সবার খেয়াল রাখতেন। আর তাঁর কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ছিল মিথ্যা কথা।
স্যার তো বিশাল আয়োজন করে শুটিং করত, তাই না?
স্যার ছিল নির্লোভ মানুষ। যা করতে ইচ্ছে হতো তিনি তা বিশাল করে করতেন। মনের আনন্দ ও প্রশান্তির জন্য তিনি সবই করতেন। শ্রাবণ মেঘের দিন বা দুই দুয়ারীর শুটিংয়ের আয়োজন ছিল বিশাল। দুই দুয়ারী যদি তিন মাস টানা চলত তাহলে সে সময় তিনি ২০-৩০ কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারতেন। তিনি নির্লোভ বলেই সেই চিন্তা করেননি।
নাট্যজগতে হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা পূরণ কি হবে?
শূন্যতা তো পূরণ হওয়ার নয়। হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে নাটক করতেন সেভাবে লেখা আর ডিরেকশন দেওয়া এখন আর এই পর্যায়ের কাছাকাছিও কেউ নেই। এখন আর ওই ধরনের নাটকও নেই, ওই শ্রেণির দর্শকও নেই।
তাঁর শেষ কোনো ইচ্ছা ছিল?
স্যারের ক্যানসার হাসপাতাল করার ইচ্ছা ছিল।
তাঁকে তো আপনি স্যার বলে সম্বোধন করতেন?
তিনি আমার শিক্ষকের বন্ধু ছিলেন বলেই সব সময় ‘স্যার’ বলেই সম্বোধন করেছি। স্যারের পরিচালনায় প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছিলাম ‘সবুজ সাথী’ নাটকে, স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মী হিসেবে। চরিত্র ছিল ছোট। এটির পর থেকেই স্যারের প্রায় সব নির্মাণেই থাকতাম। আর তাঁর সঙ্গে প্রথমবার করি ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’।
তাঁর পরিচালিত কোন কাজ অভিনীত শ্রেষ্ঠ কাজ?
আলাদা করে কোনোটির নাম বলা সম্ভব নয়। যত কাজই করা হোক না কেন, যত ভালো কাজই হোক, স্যারকে সব স্থানেই খুঁজে বেড়াই। মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিনেও অন্য সবার মতো আনন্দ করতে পারি না। কারণ, মৃত পিতার জন্মদিনে সন্তানের উচ্ছ্বাস মানায় না।
চিকিৎসা নাকি অভিনয়-কোন জায়গাটি বেশি পছন্দের?
দুটোই। তবে যদি কোনোটিকে ছাড়তে বলা হয় তাহলে বোধ হয় অভিনয় ছেড়ে দেব। একবার ১৫ দিন অসুস্থ হয়েছিলাম। রোগীরা অনেক দোয়া করেছিল। তাদের ভালোবাসাটা অন্যরকম। ‘শ্যামল ছায়া’র শুটিং যখন করতাম, প্রতিদিন রোগীরা খাবার নিয়ে আসত। একবার হুমায়ুন স্যার বললেন, ‘ও এত খাবার পায় কোথা থেকে।’ তখন অন্যরা বলেছিলেন, ‘তাঁর রোগীরা খাবার দিয়ে যায়।’
এটা সবার ভালোবাসা।