আশির দশকের বিটিভি নাটকে বেডরুমের দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটার কথা মনে আছে? একজন শাশ্বত বাঙালি নারীর হাসিমাখা মুখ। কারও মৃত স্ত্রী কিংবা প্রিয়জনের স্মৃতি স্মরণে ছবিটা টাঙানো থাকত। ছবিটা দেখেছিলাম হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত ‘একা একা’ নাটকে। সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নওয়াজীশ আলী খান প্রযোজিত কালজয়ী সিরিজ নাটক ‘বহুব্রীহি’তে। ছোট্ট ফুটফুটে দুটো শিশু- তোরসা ও রেহনুমা তারান্নুমের মা ও আসাদুজ্জামান নূরের মৃত স্ত্রীরূপে। ফেসবুকে এ বিষয়ে #ঊঁঢ়যড়ৎরধ #হড়ংঃধষমরধ #ৎবঃৎড় নামক একটি সাইডে লেখা হয়, ছবিটার প্রতি বিশেষ কৌতূহল ছিল। তাই জানতে চেয়েছিলাম স্বনামধন্য প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খানের সন্তান তোরসা খানের কাছে। তিনি বাবার সঙ্গে কথা বলে আমাকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। করুণ স্মৃতি। আর তা হলো ফ্রেমে বাঁধানো মায়াবতী বধূর ছবিটা নেওয়া হয়েছে বিটিভির ভিডিও লাইব্রেরি থেকে। এটি কীভাবে লাইব্রেরিতে এলো, কেউ জানে না। বহুদিন আগে খ্যাতিমান প্রযোজক সৈয়দ সিদ্দিক হোসেন ছবিটা প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জনপ্রিয় টিভি নাটক ‘আসিয়া’তে। তারপর কাজী মাহমুদুর রহমান রচিত ও সৈয়দ সিদ্দিক হোসেন প্রযোজিত ‘রাহু’ নাটকে। সেখানে সৈয়দ আহসান আলী সিডনীর প্রয়াত স্ত্রীর ছবি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ছবির পেছনে নেপথ্য কণ্ঠও ব্যবহৃত হয়েছে। বাস্তব জীবনে সেই মায়াবতী মেয়েটা নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর গৃহবধূ। ‘বহুব্রীহি’ সম্প্রচারের পর সেই ভদ্রমহিলা টিভি ভবনে এসেছিলেন নওয়াজীশ আলী খানের সঙ্গে দেখা করতে। ততদিনে তার মুখে সেই মায়াবী ভাবখানা নেই। তিনি অভিযোগ করেন তার স্বামী এ ছবি নিয়ে তার সঙ্গে বাদানুবাদ করেন।
সব কথা শুনে নওয়াজীশ আলী খান অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন। তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর আর কখনো ছবিটা টিভি নাটকের দেয়ালে ঝুলতে দেখা যায়নি। মেয়েটাকেও আর কখনো দেখা যায়নি। তারপর একদিন খান সাহেব জানতে পারেন- সেই মেয়েটা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। পুরো ঘটনায় তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পান। আজও সেই স্মৃতি মনে হলে তার মন খারাপ করে।