৭ জুলাই, ২০২০ ১৮:০০

সন্তানদের অপেক্ষায় এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য, পছন্দের স্থানে সমাধি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সন্তানদের অপেক্ষায় এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য, পছন্দের স্থানে সমাধি

ফাইল ছবি

অস্ট্রেলিয়া থেকে দুই সন্তান ফেরার পর বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে সমাহিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে পর্যন্ত কিংবদন্তি এই শিল্পীর মরদেহ রাখা হবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হিমঘরে। তবে বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের সম্ভাব্য শেষকৃত্য আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিল্পীর বোন জামাই ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস। মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
 
তিনি বলেন, ‘৮ জুলাই (বুধবার) রাতে এন্ড্রু কিশোরের ছেলে এন্ড্রু জুনিয়র সপ্তক অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবেন। তবে শিল্পীর মেয়ে সংজ্ঞার ফিরতে দেরি হচ্ছে। তার সম্ভাব্য ফেরার সময় আগামী ১৩ জুলাই রাতে। ১৪ জুলাই সকালে রাজশাহীতে পৌঁছানোর কথা আছে। এরপর ১৫ জুলাই কিশোরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। তবে সন্তানদের ফিরে আসার উপর নির্ভর করছে কবে শেষকৃত্য হবে।   
 
ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, ১৫ জুলাই সকাল ৯টার দিকে মরদেহ সিটি চার্চে নিয়ে ধর্মীয় আচার শুরু করা হবে। সাড়ে ৯টায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এন্ড্রু কিশোরের ইচ্ছা অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মরদেহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখানে তাঁর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ভক্তদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী কলেজে রাখা হবে। সেখানেও ভক্ত-অনুরাগীদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে। শ্রদ্ধা জানানো শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় এন্ড্রু কিশোরকে সমাধিস্থলে নেওয়া হবে।
 
ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, ‘সমাধিস্থলে তার বাবা-মায়ের সমাধি থাকলেও তাদের কাছেই তাঁকে সমাধি করা হবে এমন নয়। কিশোরের পছন্দের একটি জায়গা তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। সেই পছন্দের জায়গাতে তাকে অনন্তকালের জন্য সমাহিত করা হবে।’
 
এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট সংলগ্ন মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিল্পীর নিথর দেহ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
 
এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই ছিলেন চিকিৎসার জন্য। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয়দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয় গত ১১ জুন। এরপর থেকে তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। ঢাকা থেকে রাজশাহী এলে তিনি এই বাসাতেই থাকতেন।
 
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতেই জন্ম নেন এন্ড্রু কিশোর। প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
 
এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
 
বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর