৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৯:৪২

'তাঁর ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে একটি বই লেখার'

আলী রীয়াজ

'তাঁর ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে একটি বই লেখার'

আকবর আলি খান

আকবর আলি খান-এর জীবনাবসান কেবল একটি যুগেরই অবসান ঘটালো তা নয়, এর মধ্য দিয়ে এই সময়ের সম্ভবত সবচেয়ে সাহসী কণ্ঠস্বর নিরব হয়ে গেলো। যে কোনো মৃত্যুই অপূরণীয়, কিন্ত কিছু মৃত্যু সমস্ত জাতির জন্যে তৈরি করে অপূরণীয় শূন্যতা – আকবর আলি খানের মৃত্যু এই দুঃসময়ে গোটা জাতির জন্যে এক অভাবনীয় শূন্যতা তৈরি করে দিলো।

পেশাগত জীবনে তিনি সরকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন। ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান এবং অর্থনীতির জগতে তাঁর বিচরণ ছিলো সমানভাবে, সাহিত্যে তাঁর আগ্রহ সকলের জ্ঞাত। তাঁর গবেষণাভিত্তিক লেখা, এমন কি আত্মজীবনী পাঠেও আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি একটি পথের সন্ধান করছেন – তাঁর একার জন্যে নয়, বাংলাদেশের জন্যে, বাংলাদেশের মানুষের জন্যে। ‘অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনা জালে রাজনীতি’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন তাঁর ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে একটি বই লেখার, ভেবেছিলেন ইংরেজিতে লিখবেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলায় খানিকটা রম্য ভাবেই লিখলেন; কিন্ত উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট – ‘আমি চাই বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে চিন্তা করুক এবং নিজেরাই সংস্কারের পথ বেছে নিক’। তাঁর একটি গ্রন্থের শিরোনাম হচ্ছে ‘অন্ধকারের উৎস হতে’; এই বইয়ের উপশিরোনাম হচ্ছে ‘সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতি সম্পর্কে আলোর সন্ধান’। এই আলোর সন্ধানে তিনি সচেষ্ট থেকেছেন। 

পেশাগত জীবনের শেষ হবার পর তিনি উপহার দিয়েছেন অসামান্য কিছু গ্রন্থ। বাংলাদেশের ব্যুরোক্রেসি বোঝা এবং তার সংকট কোথায় তা উপলব্ধি করার জন্যে আমাদের অবশ্য পাঠ্য হচ্ছে ২০১৫ সালে প্রকাশিত Gresham’s Law Syndrome: An Analysis of the Bangladesh Bureaucracy। 

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেবে একজন পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান মানুষের কথা, একজন জ্ঞানী মানুষের অবদানের কথা, মনে করিয়ে দেবে কী করে প্রচলিত চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়। আমরা এই বইগুলো বারবার পাঠ করবো। কিন্ত তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানোর প্রকৃত উপায় হচ্ছে অকুণ্ঠ চিত্তে সত্য প্রকাশ করা, কেননা আকবর আলি খান সেই কাজটিই করছিলেন – তাঁর লেখায়, তাঁর কথায়, তাঁর সক্রিয়তায়। তাঁর কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন আমাদের।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর