দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকের অপেক্ষায় বিএনপির সেই নেতারা।
ওয়ান-ইলেভেনে ‘কথিত সংস্কারপস্থি’ বলে খ্যাত গুটিকয় নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-এমপি দলের বাইরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে দলের বাইরে থাকলেও নতুন কোনো দলেও যুক্ত হননি তারা। দলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ নিজ এলাকায় বিএনপির পক্ষে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এই নেতাদের সবাই ছিলেন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ছিলেন তারা জনপ্রিয়। এখনো তাদের এলাকায় ভিত্তি মজবুত। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও আগের মতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ওই নেতাদের দলে নেওয়া সময়ের দাবি বলে বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক মনে করে। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে এদের অনেকেই দলীয় মনোনয়নও পাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের বাইরে থাকা বিএনপির এসব নেতার মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, সাবেক সচিব কবি মোফাজ্জল করীম, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, আনোয়ার তালুকদার, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, সাবেক হুইপ, পিরোজপুর জেলা সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক হুইপ রেজাউল বারী ডিনা, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন, সাবেক এমপি, সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, চাঁদপুরের সাবেক জেলা সভাপতি এস এ সুলতান টিটু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হায়দার খান, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, সাবেক এমপি, বরগুনার সাবেক জেলা সভাপতি নূরুল ইসলাম মণি, সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ, বরিশালের সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, ঝালকাঠির সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো, পিরোজপুরের সাবেক এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, সাবেক হুইপ খলিলুর রহমান, সাবেক এমপি আব্বাসী, সাবেক এমপি শাম্মী শের, সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি আবদুল গনি প্রমুখ। সংস্কারপন্থি হিসেবে না থাকলেও দলের বাইরে রয়েছেন সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া। ওয়ান-ইলেভেনে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। তিনিসহ তার ছেলে ও মেয়ের নামে মামলা দেওয়া হয়েছিল। তবে দেশে ফিরে মনোনয়নবঞ্চিত হন। দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঈদুল ফিতরের পর এ দাবি নিয়ে টানা কর্মসূচি দেবেন তিনি। এ লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিষ্ক্রিয় নেতাদের একই প্লাটফরমে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা চলছে। এরই মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমদকে ১৮ দলীয় জোটভুক্ত করা হয়েছে। বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পাশে রয়েছেন। অন্য নেতাদের সঙ্গেও বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিএনপির পক্ষে কাজ করানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রমজানের পর বিএনপিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে বলেও মনে করেন তারা। তবে দলের আরেকটি অংশ এখনো ওই নেতাদের মেনে নিতে পারছে না। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্যও রয়েছেন। তাদের মতে, আবারও দলের কোনো দুঃসময় এলে সংস্কারপস্থি নেতারা পল্টি দিতে পারেন। জানা গেছে, বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভ‚ঁইয়া ইন্তেকালের পর ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন এসব নেতা। একটি অংশ অবশ্য সুযোগ বুঝে আগেভাগেই বিএনপিতে ফিরে যান। ডাক পেলে বাকিরাও যে কোনো সময় ফিরবেন। ওয়ান-ইলেভেনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এখন তারা অনুতপ্তও। জেড এ খানের এখন সময় কাটে গলফ খেলে ও লেখালেখি করে। মাঝেমধ্যে টিভি টক-শোয়ও যান। এ ছাড়া নিজ এলাকা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা। এ ছাড়া রাজধানীতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারিবারিক কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। দলের সঙ্গেও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায়ও কাজ করে যাচ্ছি। চেয়ারপারসন ডাকলেই দলে ফিরব। আমার চেয়েও অনেকে বড় ভুল করে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আশা করি, দলের পক্ষে কাজ করার সুযোগ পাব। অনেকটা নিঃসঙ্গতার কারণেই ঢাকা ছেড়ে আমেরিকায় চলে গেছেন প্রভাবশালী সাবেক আমলা মোফাজ্জল করীম। আগামী তিন মাস দেশে না আসার কথাও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান তিনি। অবশ্য দলে ডাক পেলে এর আগেও চলে আসবেন বলে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত জিয়ার আদর্শের রাজনীতির সঙ্গেই থাকবেন বলেও জানান।
বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেনের এখন অলস সময় কাটছে। রাজধানীর নিকুঞ্জে নতুন বাসায় থাকেন। আগে থাকতেন টিকাটুলিতে। কিন্তু এখন আগের মতো নেতা-কর্মীদের আনাগোনা নেই। অনেকটা একাকীত্বেই সময় কাটে তার। মাঝেমধ্যে নীরবে-নিভৃত্বে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে ঘুরে আসেন। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখনো তাকে চান বলে দাবি আশরাফ হোসেনের। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমি পাইনি। আমি রাজনৈতিক কর্মী। শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করেছি। তাই প্রস্তাব পেলে অবশ্যই দলে ফিরব।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, শহীদ জিয়ার রাজনীতির সঙ্গে ছিলাম আছি এবং থাকব। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। কয়েক দিন আগেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে আসেন বলে জানান। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দল তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, তিনিই প্রথম ৫৭ ভাগ ভোট পেয়ে তার আসনে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নজির হোসেন জানান এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এখনো তার যোগাযোগ রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, শীঘ্রই দল তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। জানা যায়, বিচক্ষণ, মেধাবী, পোড় খাওয়া এই রাজনীতিবিদ এলাকার উন্নয়নসহ বিএনপি ক্ষমতায় এলে বা জনমত টানতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন তার গবেষণাধর্মী রূপরেখাও তৈরি করেছেন এই কয় বছরে।