শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা
পর্যবেক্ষণ

সবিনয়ে জানতে চাই প্রধানমন্ত্রী ওদের দই মিষ্টি খাওয়া শেষ?

পীর হাবিবুর রহমান

১. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদের কাছে অনেকবার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যাপারে। আবুল কালাম আজাদ দু-একবার কথাও দিয়েছিলেন। সাড়ে চার বছরে মনে হচ্ছে তিনি চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। '৯১ সালের নির্বাচনে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা যখন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা তখন পেশার তারে জড়ানো জীবনে তার ও আওয়ামী লীগের বিট কাভার করতাম। তার সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহের জন্য মিন্টো রোডে বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবন, ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সারা দেশ ছুটে বেড়িয়েছি। যখন-তখন তার সামনে হাজির হয়ে জাতীয় রাজনীতির জ্বলন্ত সব ইস্যুতে প্রশ্ন করেছি, উত্তরও পেয়েছি। তার সফরসঙ্গী সংবাদকর্মীরা বরাবর তার মিডিয়াবান্ধব ও মানবিক স্বভাবসুলভ গুণাবলি নিয়ে প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেন না। কাছে থেকে দেখা শেখ হাসিনাকে একান্নবর্তী মধ্যবিত্ত পরিবারের মায়াময় বড় বোনের চেহারায়ই উদ্ভাসিত হতে দেখেছি। নিজ থেকে সফরসঙ্গী সংবাদকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজখবর নিতেন। '৯৬ সালে গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর গণভবনের সবুজ আঙিনায় তিনি তার সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের চা পানে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেছিলেন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যেসব সংবাদকর্মী তার সঙ্গে সারা দেশ সফর করেছেন খবর সংগ্রহের জন্য, তিনি যেন তাদের বিদেশ সফরে নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব কবুল এবং তা রক্ষা করেছিলেন। তার প্রেস সচিব হয়েছিলেন মরহুম জাওয়াদুল করিম। মাঠের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তার সমর্্পক ছিল না। যাদের ছিল সেই ইকবাল সোবহান চৌধুরী বা শফিকুর রহমান হননি। ২০০০ সালে জাতিসংঘের মিলেনিয়াম সেশন কাভার করতে গেলে নেশন প্লাজা হোটেলের লবিতে মরহুম জাওয়াদুল করিমের সঙ্গে কে জানি পরিচয় করিয়ে দিলে তিনি তখনো চিনতে পারছিলেন না। করমর্দনকালে বলেছিলাম, এই নিয়ে আপনার সঙ্গে আটবার পরিচিত হলাম। সেই শাসনামলে শেখ হাসিনার সঙ্গে মাঠে-ময়দানে কাজ করা সংবাদকর্মীদের মধ্যে আমরা কয়েকজন তার বিদেশ সফরসঙ্গী থেকে বাদ পড়লেও যারা কখনো তার সঙ্গী হননি, মাঠে-ময়দানে বা বিট কাভার করেননি তাদের একটা অংশ বিদেশ গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে। একবার জাতীয় প্রেসক্লাবের চায়ের টেবিলে শামীম আহমেদ বিজ্ঞের মতো প্রশ্ন করেছিলেন, পীর হাবিব কেন বাদ পড়লেন? জবাবে বলেছিলাম, সফরসঙ্গী কারা হবেন তার তালিকা তো প্রধানমন্ত্রী করেননি! প্রেস সচিব জাওয়াদুল করিম মাঠের সংবাদকর্মীদের চিনেনও না। শুনেছি কখনো আপনি বা কখনো বেবী মওদুদ তালিকা করে দেন। আপনারা অপছন্দ করেন বলে যেতে পারিনি। আপনাদের সঙ্গে যারা ছায়াসঙ্গী তাদের নাম দিয়েছেন, তারাই গিয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর সুধাসদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের কয়েকজনের বৈঠকের আগে বন্ধুবর প্রণব সাহা বলেছিল এ বিষয়টি সে উত্থাপন করবে। তাকে এই বলে বিরত করেছিলাম, কারা বিদেশ যাবে সেই তালিকা প্রধানমন্ত্রী করেন না। আর এ ধরনের ছোটলোকী বিষয়ের অবতারণা করলে বৈঠকে যোগ দেব না। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য কেন, কোনো শাসকেরই অনুদানের প্লট বা করুণা ভিক্ষা নিতে এ পেশায় আসিনি। কাউকে কাউকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি হোক দল ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরসঙ্গী হতে গিয়ে পাসপোর্ট করতে এবং স্যুট বানাতে ও টাই কিনতে দেখেছি। আল্লাহর অসীম রহমতে এদের দলে নাম লেখাইনি। ২০০৮ সালে গণরায় নেওয়ার পর মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে তার প্রেস সচিব হন ইত্তেফাকের এককালের শিফট ইনচার্জ, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আবুল কালাম আজাদ। আগেরবার তিনি ওয়াশিংটনে প্রেস মিনিস্টার হন। সাংবাদিকদের যারা প্রেস মিনিস্টার হয়েছেন সব সময় আমার তাদের সুশীল কেরানি মনে হয় কেন যেন। হাসিমুখের মানুষটির বিনয়ী ব্যবহারে সব সময় আপনজন মনে হয়েছে। অন্তরে কী ছিল বা আছে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পর ইত্তেফাক ভবনের তার সহকর্মী ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সহযাত্রীরা বলতে পারবেন। পূর্বাচলে প্লট দেওয়ার আগে মানুষটি আমাকে বলেছিলেন যেন আমার আবেদন প্রত্যাহার না করি। কিন্তু লটারিতে প্লট না ওঠায় আমি আমার আবেদন প্রত্যাহার করে নিই মানে টাকাটা উঠিয়ে নিই। আমার প্রতি তার সহমর্মিতা দেখে আমার স্ত্রীও আপত্তি জানিয়েছিল। মন যা মানে না ছেলেবেলা থেকেই তা করতে না পারা আমার স্বভাব। তাই ঘরে-বাইরে বৈরী সে াতের বিপরীতে আমার সাঁতার কাটতে হয়েছে। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা আমার আবেগের জায়গায় বাস করলেও তিনি যখন আওয়ামী লীগ নামের দলটির সভানেত্রী ও সরকারপ্রধান তখন আমি তার সমালোচক। তার সমালোচনা করব আবার তার দেওয়া অনুদান-অনুকম্পা নেব তাতে মন সায় দেয়নি। আওয়ামী লীগ বিএনপিতে একদল বেনিফিশিয়ারি আছে পেশাদারিত্বের মর্যাদা খাটো করে যা পায় তা-ই খায়। খাবার বেলায় দলীয় কর্মীদেরও কেউ কেউ হার মানায়। দল যখন বিপদে পড়ে এরা তাদের দল বা নেত্রীদের দুই আনা সাহায্য করা দূরে থাক পাশেও দাঁড়ায় না। এরা না পারে তাদের নেত্রী বা দলের জন্য লিখতে বা বলতে, পারে শুধু দুই হাতে নিতে। আড়ালে-আবডালে নেত্রীদের সমালোচনা করতেও ছাড়ে না। ওয়ান-ইলেভেনে এদের বীভৎস রূপটা দেখার সুযোগও হয়েছিল। এ ধরনের নিমক হারামের সংখ্যা বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগে একটু বেশি দেখা যায়। তাদের নেত্রী বা দল যখন বিপদে পড়ে তখন তারাও সুর পাল্টে নেত্রীর কাঁধে বা তাদের দলের কাঁধে দোষ চাপিয়ে সুশীলের মুখোশ পরে নেয়। ওয়ান-ইলেভেনে দুই নেত্রী ও দুই দলের টক-শো সমালোচক এক বাচাল সম্পাদককে ২০০৮ সালের পর দেখেছি আবুল কালাম আজাদের প্রটোকল অফিসারের মতো ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘুরতে। সমুদ্র বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা মঞ্চে দুই হাত নেড়ে লাফাতে। বহু বছর আগে রিপোর্টিং ছেড়ে আমেরিকায় চলে গিয়ে বাড়ি বেচাকেনার দালালিতে ব্যস্ত এক ব্যক্তি ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় এসে তৎপর হন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নাকি প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হবেন এ আশায়। নৌকার ভরাডুবি দেখে পালিয়ে যান নিঃশব্দে। তাকেই আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ (এখন শুধু সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী) ও প্রেস সচিব আজাদের ছায়াসঙ্গী হতে দেখা যায়। নিউইয়র্কের ডলার ধরতে ব্যর্থ মানুষটি ঢাকার উড়ন্ত টাকা ধরতে সফল হন। শোনা যায়, টিভির মালিকানা পেয়েছেন। আরও কত কী! যাক, এক কথা বলতে অনেক কথা। আবুল কালাম আজাদকে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম তা সাড়ে চার বছরে আলোর মুখ দেখেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মুখোমুখি হতে অতীতেও ভয় পাননি এখনো পান না। যত দূর চিনি মিডিয়া দেখলে তিনি এগিয়ে যান এবং দ্বিধাহীনভাবে প্রশ্নের উত্তর দেন। বিবিসির হার্ড টক-শো যে প্রধানমন্ত্রীকে ঘামাতে পারেনি সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আজ বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন_ আপনার প্রেস সচিব আদৌ আপনার সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রস্তাবটি আপনার কাছে উত্থাপন করেছিলেন কি না? অনেকে বলেন, তিনি এই আগ্রহের কথা জানানোর সামর্থ্য রাখেন না। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। যদি সামর্থ্য না থাকে তাহলে প্রেস সচিবের প্রয়োজন হবে কেন? শুধু শুধু মন্ত্রিসভার ব্রিফিংয়ের জন্য?

২. সবিনয়ে জানতে চাই, ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলের শেষ দিকে আপনি বিটিভিতে জনপ্রিয় উপস্থাপক আনিসুল হকের সঞ্চালনায় দেশবাসীর মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে দুটি অনুষ্ঠান সারা দেশে সাড়া ফেলেছিল। সাধারণ মানুষ ফ্যাঙ্-টেলিফোনে প্রশ্ন করেছিল। জবাব দিতে কার্পণ্য করেননি। এবার দেশবাসীর মুখোমুখি হতে আপত্তি কোথায়? যদি হতেন আমরাও প্রশ্ন করতে পারতাম। মাঝেমধ্যে সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন হয় টিভিতে তা দেখে মুগ্ধ হতে পারি না। আপনি অনেক কঠিন প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত হলেও একদল দলকানাকে টিভির পর্দায় নির্লজ্জ তোষামোদিতে ব্যস্ত হতে দেখি। একবার বিদেশ সফর শেষে শীতের বিকালে আপনার কার্যালয়ের বাইরে সুন্দর আয়োজন করেছিলেন। সেখানে পুরনো দলকানাদের সঙ্গে দু-চার জন নব্য দলদাসের আবির্ভাব হতে দেখা গেল। পেশাদারিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন করতে পারলেন না দেশ ও মানুষের জন্য। একজন সাহিত্যিক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে দেখা গেল তার লেখা কলাম পাঠ করতে থাকলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনে দেশ, মানুষ বা আপনার আদৌ কোনো লাভ হয় কি? নাকি চা-নাশতার পয়সাটুকুও আপনার সময় পানিতে যায়? সাড়ে চার বছরে এত টিভি চ্যানেল, এত সংবাদপত্র কিন্তু কোথাও আপনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও সাক্ষাৎকার দেখা যায় না কেন? আপনার শত্রুরাও জানে আপনার মিডিয়া বান্ধবমুখী চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের কথা। একসঙ্গে একাধিক টিভি চ্যানেল বা একাধিক সংবাদপত্রকেও তো সাক্ষাৎকার দেওয়া যেতে পারে। মনে পড়ে '৯৪ সালে ১৬ ডিসেম্বরের আগে আপনার সাক্ষাৎকার চাইলে তখনকার আপনার সরকারি প্রেস সচিব আবু তৈয়ব ব্যবস্থা করে দেন। তবে একা নন, সৈয়দ বোরহান কবীর ও প্রণব সাহাকে ডেকে আনেন। আরেকবার সাবেক ডেপুটি প্রেস সচিব নকিব আহমেদ এক হরতালের সকালে তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে দিয়েছিলেন। তখন সংবাদকর্মীরা আপনার সঙ্গে গল্পে বা সাক্ষাৎকার পর্বে বসলে আপনার বক্তব্যই পেতেন না চিন্তা-ভাবনা ও গতিপ্রকৃতি উপলব্ধি করতে পারতেন। এখন কেন পারেন না? মিডিয়ার এই যুগে আপনার সঙ্গে মিডিয়ার দূরত্ব বাড়ছে না কমছে? কমলে কারা দায়ী?

৩. প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয়ে জানতে চাই, আপনি জাতির জনকের কন্যাও। গরিব জনগণই নয়, বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তখন শাসকের আসনে এত আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট ও সাবেক আমলাদের দাপট কেন বেশি? ৩২ লাখ গরিবের বিনিয়োগ শেয়ারবাজার থেকে যারা লুটে নিয়ে গেছে ইব্রাহিম খালেদের তদন্তে তারা চিহ্নিত হলেও অর্থমন্ত্রী কেন সংসদে দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো বললেন, এদের হাত ও ক্ষমতা অনেক লম্বা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন প্রধানমন্ত্রী তখন সাধারণ মানুষ শেয়ার কেলেঙ্কারির বিচার পায় না কেন? সবিনয়ে জানতে চাওয়ার আগে এ জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ভাটি বাংলার উত্তাল ঢেউয়ের মুখে রাজনীতিতে উঠে আসা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে মন্ত্রী করার জন্য বার বার পরামর্শ দেওয়ায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় রাতগভীরে কালো বিড়ালসহ ধরা পড়ার পর কেন তিনি দফতরবিহীন থেকে যান? সবিনয়ে জানতে চাই পদ্মা সেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ নানা কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলেও এত বিলম্বে কেন? বিলম্বে নেওয়ার কারণে কি সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি? আর ব্যবস্থা নিলেও দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দিতে গেলেন কেন? সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি আপনার আগ্রহ অনেক বেশি। ব্রিটিশ, ভারতের পার্লামেন্টসহ যেখানেই গেছেন সংসদের দর্শক হয়েছেন। সংসদের কার্যক্রম নিয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল দেখিয়েছেন। বই-পুস্তক সংগ্রহ করে পড়েছেন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই আপনি মন্ত্রীর বদলে স্থায়ী কমিটির সভাপতির আসন সদস্যদের হাতে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মতো প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করে আমাদের আশাবাদী করেছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলকে সংসদ বর্জনের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ও প্রাণবন্ত করার আন্তরিক উদ্যোগ কি সাড়ে চার বছরে সরকারি দল নিয়েছিল? সবিনয়ে জানতে চাই সংসদে যেভাবে মানুষের সমস্যার চেয়ে নেত্রীবন্দনা ও দুই দলের মহিলা সংসদ সদস্যদের লাগামহীন আচরণ ও কথাবার্তা আর জাতীয় নেতানেত্রীদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য আসছে তা সুস্থধারার রাজনীতির জন্য কতটা সঙ্গতিপূর্ণ? এ প্রজন্ম এ কোন সংসদ দেখছে আপনি যার নেতা? কেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে আপনার সাফল্য তারা তুলে ধরতে পারেন না? স্থানীয় সরকারের কাজ এমপিরা কতকাল দখলে রাখবেন? কেন উপজেলা পরিষদ ক্ষমতাহীন? এ দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গৌরবের নেপথ্যে রয়েছে ছাত্র সমাজের ভূমিকা। ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় উজ্জ্বলতা ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে। সেনাশাসনের জমানায় নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ছাত্র রাজনীতিকে নেতৃত্বের মহিমায় আদর্শের পথে পরিচালিত করেছে। সেই নির্বাচন বন্ধ করে ছাত্র রাজনীতির গৌরবকে কেন গণতন্ত্রের জমানায় ২২ বছরে স্তব্ধ করে দেওয়া হলো? সেনাশাসনের জমানায় যে প্রশাসন ছিল দক্ষ তা গণতন্ত্রের জমানায় কেন দলীয়করণের আগ্রাসনে পতিত? বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে আওয়ামী লীগে সাধারণ পরিবারের স্কুল মাস্টার থেকে উকিল-মোক্তাররা রাজনীতির পথ থেকে নৌকায় চড়ে সংসদে আসতেন তাদের বদলে আজ কারা আসছেন? এরা কি গণমুখী রাজনৈতিক কর্মী? মন্ত্রী-এমপিদের সাড়ে চার বছরের আমলনামায় কার সম্পদ কতটা হয়েছে সেই খবর মানুষের মুখে মুখে থাকলেও আপনার হিসাবের খাতায় কি আছে? দুনিয়াজুড়ে ব্যবসায়ী ও শোবিজ জগতের তারকারা ভোগবিলাসী জীবন-যাপন করলেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি-নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ কীভাবে ভোগবিলাসী জীবন-যাপন করেন? এরা কি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে একবারও যান না? দেখেন না তার অতি সাধারণ জীবন-যাপনের চিত্র? এরা কেন আপনার স্নেহছায়া পান? বঙ্গবন্ধু বার বার বলেছেন আত্দসমালোচনা, আত্দসংযমের মাধ্যমে আত্দশুদ্ধি করতে। আপনার অফিসের স্টাফ থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি-নেতা-কর্মী ও দলবাজ প্রশাসনের কর্তারা কি তা করেন বলে আপনার মনে হয়? পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি সরকারের মতো আপনার সরকার অনেক কর্মসূচি অসহায় গরিবের জন্য চালু করেছিল। আপনি কি জানেন স্থানীয়ভাবে অনেক এমপি সিন্ডিকেট ও প্রশাসনের একটি অংশ তা কীভাবে লুটে নিয়ে যাচ্ছে? সবিনয়ে জানতে চাই আপনার মন্ত্রী-এমপি-নেতা-কর্মীরা কি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্দজীবনী পাঠ করে বাঙালির মহত্তম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামমুখর জীবনকে উপলব্ধি করেছেন? বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্দজীবনী পাঠ করে আমাদের সন্তানরা একদিন এ দেশের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা যখন করবে তার প্রতিটি ভাষণ হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে মেধা ও মননশীলতায় বিশ্লেষণ করবে তখন আজকের আওয়ামী লীগকে কি শেখ মুজিবের আদর্শের আওয়ামী লীগ বলবে? গরিবের দল আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা কীভাবে ব্যাংকের মালিক হচ্ছেন? আপনি ক্ষমতায় থাকতে কেমন করে অতীতের অভিশপ্ত শাসনামলের কলঙ্কিতদের পথ অনুসরণ করে টেলিভিশনের লাইসেন্স বাণিজ্য ও তদবির-দুর্নীতিতে ফুলে ফেঁপে ওঠে একদল হাইব্রিড ও দলকানা? অসমাপ্ত আত্দজীবনী পাঠ করে কেন আপনার সরকার ও দল মুসলিম লীগের পতনের কারণ ভাবে না? বিরোধী দল দমনে শীর্ষ নেতাদের জেলে পোরে?

৪. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের মুখে মুখে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরকারের দূরত্বের নেপথ্যে এক মন্ত্রীর স্বামী। সত্য-মিথ্যা যাই হোক, দুনিয়াজুড়ে যার নাম, এত সম্মান তিনি তো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশেরই গৌরব। দলের আশ্রিত সুবিধাবাদীরা যদি লাইসেন্স নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিক হতে পারেন তাহলে তার স্বপ্নের গরিবের ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক একজন ড. ইউনূসের অভিভাবকত্বে ছেড়ে দিলে কী এসে যায়? ড. ইউনূসকে আপনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রশ্নে প্রয়োজনে পরামর্শ দিতে পারেন। একজন ড. ইউনূস আজ আপনার সুহৃদ হিসেবে পাশে থাকার প্রয়োজন আপনারই অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করেন, আপনি করেন কি? সবিনয়ে আরও জানতে চাই, যে দল বঙ্গবন্ধু ও আপনার নেতৃত্বে একটি নিজস্ব ধারায় জনগণকে নিয়ে নেতা-কর্মীদের তিল তিল শ্রম, ঘাম ও মেধায় তৃণমূল বিস্তৃত হয়েছে সেই দলকে আপনি ওয়ান-ইলেভেনের পর যাদের বাদ দিয়ে সাজিয়েছেন সাড়ে চার বছরের মাথায় চার সিটি করপোরেশনের ফলাফল সরকারের নানা ব্যর্থতার পাশাপাশি তাদের সাংগঠনিক ও অযোগ্যতা দলের নেতা-কর্মীই নয় দেশবাসীর সামনে চিহ্নিত করেছে। শাহবাগ দিয়ে যারা বিভক্তি আনেন তারা কেন চার সিটিতে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে নামেননি যোগ্য প্রার্থীদের জন্য? দলের অনেকে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত। দলের মুখ হয়ে মানুষ ও কর্মীদের কাছে এখনো সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের সবেধন নীলমণি হয়ে বেঁচে আছেন। এখনো তাদের উত্তরসূরি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো একজন নেতা দলে তৈরি হয়নি। যে লেনিনদের দলের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কর্মীরা তাকিয়ে বলে তাদের নাকি আজ জামিন নেই। অনেকে বলে আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট ও হাইব্রিড যারা সাড়ে চার বছরে ইচ্ছামতো খেয়েছেন কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে মোরগ-পোলাও, তাদের এখন দই-মিষ্টি খাওয়া শেষ। সামনে দলের ভরাডুবি দেখলে আদর্শহীন কমিউনিস্টরা আওয়ামী লীগের কাঁধে দায় চাপিয়ে সুশীল হয়ে যাবেন। হাইব্রিডরা টাকার জোরে কোন ভবনে আশ্রয় নেবেন খোঁজ পাওয়া যাবে না। সবিনয়ে জানতে চাই এই পোড় খাওয়া দলটি যে দলের নেতৃত্ব আপনি গ্রহণ করেছিলেন '৮১ সালে ঐক্যের প্রতীক হয়ে, দীর্ঘ সংগ্রামে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে এনেছিলেন ক্ষমতায়, বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন আপনি, ৩৯ আসনের আওয়ামী লীগকে এনেছেন ২৬২ আসনে, সামনে এই দলটিকে সেসব প্রাজ্ঞ-অভিজ্ঞ নেতার সঙ্গে নবীনের সমন্বয় ঘটিয়ে জেলা পর্যায় পর্যন্ত চিরসবুজ চেহারা দিতে উদ্যোগ নেবেন কি? '৮১ সালে যেদিন আসেন দলের প্রতীক হয়ে সেদিন দলে যতটা গণতন্ত্র ছিল আজ কি তার কিছুটাও আছে? দলের ভেতর গণতন্ত্র না থাকলে সেই দল কি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে? সবিনয়ে জানতে চাই, নির্বাচনের ছয় মাস আগে সরকার ও বিরোধী দল যেখানে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে, সেখানে দেশবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকাই স্বাভাবিক। আপনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক এলে কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। সেনাশাসকরাও এক দশক থাকতে পারেনি যে দেশে, সে দেশে দুই দলের সমঝোতা হলে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ব্যালট ও গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত। না হয় অনিশ্চিত নির্বাচন গণতন্ত্রকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারে না। এ অবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় হাঁটতে আপনি রাজি কি না সবিনয়ে জানতে চাই প্রধানমন্ত্রী? জানতে চাই টক-শোয় কথা বলেন গুটিকয় মানুষ। তাদের প্রতি সরকারি মন্ত্রী-নেতাদের এত ক্ষোভ কেন? যারা সরকারের খেয়ে-পরে পথ হাঁটেন তাদের তালিকা দীর্ঘ। তারা সমস্বরে কোরাস গাইলে টক-শোর কণ্ঠ কি আর শোনা যাবে? তবে কি আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, হাইব্রিডদের সঙ্গে বেনিফিশিয়ারি সুশীল দলদাসদাসীরাও দই-মিষ্টি খেয়ে পথ হাঁটা দিয়েছেন? শেষ প্রশ্নটি হলো, বিএনপি-জামায়াতের অভিশপ্ত শাসনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে গণরায় দিল মানুষ। যেটিকে কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বলে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বানিয়ে হঠকারী নষ্ট চীনা ও মস্কোপন্থিরা মানুষকে বিভক্তই করেনি ধর্মপ্রাণ আলেম ও মুসলি্লদেরও খেপিয়ে দিল! এই আলেম-ওলামারাই কি ২০০৮ সালে নৌকায় ভোট দেননি? তাহলে সামনের ভোটে কী হবে?

সর্বশেষ খবর