শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

রমজানের পর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল

রমজানের পর পরই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের চিন্তাভাবনা চলছে। জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির লক্ষ্যে দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে এই কাউন্সিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে দলটি। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফেরার পর পরই কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করবেন। চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণসহ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, এবারের কাউন্সিলে মহাসচিবের বিষয়টিরও নিষ্পত্তি হবে। মির্জা ফখরুলকে এবার ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সে ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির মধ্য থেকে নতুন করে কাউকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এমনটি হলে মির্জা ফখরুলকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। মূলত এবার আর মহাসচিব পদটি ভারাক্রান্ত করে ঝুলিয়ে রাখা হবে না। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির চার শতাধিক সদস্যের মধ্যে নিষ্ক্রিয়, অদক্ষ ও হাইব্রিড প্রকৃতির কিছু সদস্য এবং সম্পাদক/সহ-সম্পাদক পর্যায়ের কিছু নেতা বাদ পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হওয়ার যোগ্য নন, অথচ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়ে গেছেন এমন কিছু নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে এদের পদে স্থলাভিষিক্ত করা হবে অধিকতর যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের। এ ছাড়া যারা বর্তমানে একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অতিরিক্ত পদগুলোর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই চাচ্ছেন আসন্ন রমজানের পর পর কাউন্সিল সেরে ফেলতে। তাদের মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখন কোন দিকে মোড় নেয় তা বলা মুশকিল। তবে সামনের দিনগুলোয় পরিস্থিতি যে শুভকর হবে না তা তারা আঁচ করতে পারছেন। সূত্রটি আরও জানায়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে যারা এবার ছিটকে পড়তে পারেন এমন একটি সক্রিয় গ্রুপের সদস্যরা চাচ্ছেন কাউন্সিল নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করতে। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা রমজানের শেষ ১০ দিন কাটাবেন সৌদি আরবে। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসবেন সপরিবার পবিত্র ওমরাহ করতে। এ সময় তাদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎসহ স্বল্পপরিসরের আলোচনাও হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর দলের জাতীয় কাউন্সিলের সময় গত বছর ডিসেম্বরে পার হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে জন্য দলের পক্ষ থেকে এর আগে আরও ছয় মাস সময় চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হয়। সেই সময়ও পার হবে চলতি জুনে। এর আগে গত ১৯ মার্চ কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ১১ মার্চ নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও দেড় শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় তা আর করতে পারেনি বিএনপি। এ প্রসঙ্গে দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্ভাবনাও আছে, আলোচনাও আছে। তবে কাউন্সিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে 'ম্যাডাম' দেশে ফেরার পর। স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে আলোচনা করে দিন-তারিখও চূড়ান্ত করবেন তিনিই।

সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে আসন্ন রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে ব্যাপক গণসংযোগ চালাবেন। সারা দেশে জেলা পর্যায়ে সফরসহ প্রতি জেলায় একটি করে বিশালাকৃতির কর্মিসভাও করবেন তারা। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি জানি না। তবে প্রস্তুতি নেওয়া আছে। অনেক কাজ আগেই সারা আছে। মাত্র সাত দিনের নোটিসেই এখন এ কাউন্সিল করা সম্ভব। অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নতুন মহাসচিব নিয়োগের বিষয়ে ঘুরেফিরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তরিকুল ইসলামের নাম বার বার আসছে। যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানও এদের মধ্যে একজনকে খুব পছন্দ করেন। এ দুজনের মধ্যে একজন সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং অন্যজন বর্তমানে সস্ত্রীক চিকিৎসার্থে ব্যাংককে আছেন। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও স্থায়ী কমিটির এ দুই সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এমনকি শেষ পর্যায়ে দুটি সিটিতে গিয়ে সরাসরি তত্ত্বাবধানও করেন। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর কয়েক দিন আগে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন। দলের কাউন্সিল সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, যে কোনো সময়ই কাউন্সিল করতে আমরা প্রস্তুত। চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্য একটি সূত্র জানায়, বেগম জিয়া দেশে ফেরার পর জাতীয়তাবাদী যুবদল, কৃষক দল ও মুক্তিযোদ্ধা দলসহ বেশ কটি অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করবেন। এগুলো এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ তা পুনর্গঠনও করা হতে পারে জাতীয় কাউন্সিলের পর। কাউন্সিল প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় কাউন্সিল আরও আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্বর ও নজিরবিহীন অভিযান চালিয়ে তা হতে দেয়নি। তবে এখনো কাউন্সিলের জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে হয়তো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

 

সর্বশেষ খবর