রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

রাতভর সংঘর্ষে নিহত ৩০

বিক্ষোভের ঘোষণা ব্রাদারহুডের

মিসরের সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত মুহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্বহাল এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে শুক্রবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত কায়রো এবং অন্যান্য শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তাতে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আর আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন আলেকজান্দ্রিয়ায়। সেখানে নিহতের সংখ্যা ১৬। কায়রোতে ৩। এ ছাড়া উত্তর সিনাই উপত্যকার আল-আরিশ শহরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে পাঁচ পুলিশ নিহত হন। সেনাবাহিনীর ব্যাপক মারদাঙ্গার পরেও মুরসির সমর্থকরা রাজপথ ছাড়েননি। তারা আরও বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল দলের পক্ষ থেকে আরও বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

তবে তাহরির স্কোয়ারে বিরোধী দলের সমর্থক ও মুরসির সমর্থকরা পরস্পরের দিকে পাথর ও বোতল ছুঁড়ে মারে। কোনো কোনো স্থানে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।

সংবাদদাতারা বলছেন, মিসরে গত কয়েক দিনের নাটকীয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটিই এ পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্দক সহিংসতার ঘটনা। এদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দলটির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা খায়রাত আল-সাতেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, সহিংসতায় প্ররোচনা দেওয়ার সন্দেহে ব্রাদারহুডের উপপ্রধান খায়রাত আল-সাতেরকে কায়রো থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গতকালের এ সহিংস ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সেনাবাহিনীসহ সব দলের প্রতি এ ধরনের সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, মিসরবাসীকেই ঠিক করতে হবে তারা কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

মুরসির পদত্যাগের দাবিতে বিরোধীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। তাকে এখনো অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে গত তিন দিনে মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকে আটক করা হয়েছে। বিবিসি জানায়, মুসলিম ব্রাদারহুড ও তাদের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ফ্রিডম পার্টির হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক শুক্রবার জুমার সময় জড়ো হয় কায়রোর রাবা আল-আদাওয়িবা মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের কাছে। জুমার নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা রিপাবলিকান গার্ডের সদর দফতরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের ধারণা, আটকের পর ওই ভবনে মুরসিকে আটকে রাখা হয়েছে। এ সময় গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত ও বহু লোক আহত হন।

সন্ধ্যার দিকে ব্রাদারহুডের লাখো সমর্থক ফের মসজিদ চত্বর ও আশপাশের রাস্তায় নেমে আসেন। দলের প্রধান মোহাম্মদ বাদি বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, 'প্রেসিডেন্টকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।' একই সঙ্গে তিনি তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অস্ত্র ব্যবহার না করতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আহমেদ আলী বলেন, 'আমরা কোনো পক্ষকেই সমর্থন করছি না। বিক্ষোভকারীর জীবন রক্ষা করাই আমাদের কাজ।'

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আদলি মাহমুদ মনসুর শুক্রবার এক ডিক্রি জারি করে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বিলুপ্তির ফলে এখন কেবলমাত্র উচ্চকক্ষ (শূরা কাউন্সিল) সক্রিয় থাকল। এএফপি, বিসিসি

সর্বশেষ খবর