রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

৫০ কোটি টাকার সোনা নিয়ে উধাও তাঁতী লীগ সভাপতি

নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের প্রায় ৫০ কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে উধাও হয়েছেন তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরী। এক মাসের বেশি সময় ধরে লাপাত্তা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের এই প্রভাবশালী পরিচালক। প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে গ্রাহকদের গচ্ছিত স্বর্ণালঙ্কার আত্দসাতের পর এনাজুর রহমান আর তাঁতী লীগের ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন না। নিজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রেখেছেন। তার বাসার খোঁজ কেউ জানে না। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের নেতা হওয়ায় এনাজুর রহমানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। অন্যদিকে পুরো বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা। এতে দারুণ বিপাকে পড়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানে স্বর্ণালঙ্কার গচ্ছিত রেখে ঋণ নেওয়া অসংখ্য গ্রাহক। ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও নিজেদের স্বর্ণালঙ্কার ফেরত না পেয়ে অসহায় গ্রাহকরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন প্রতিষ্ঠানটির পুরান ঢাকার জনসন রোডের ৩/৭/২ নম্বর শাখা অফিসের সামনে। ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের এই শাখা কার্যালয়টি।

সমবায় অধিদফতর, সমবায় ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এনাজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র হিসাবরক্ষক মোজাম্মেল হক দুলাল, হিসাবরক্ষক কবির হোসেন, পুন্ন দাস ও ক্যাশিয়ার শামীম মিয়া, এনাজুর রহমানের সহযোগী বাবু, জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন যোগসাজশে গ্রাহকদের স্বার্ণালঙ্কার এবং বিপুল অঙ্কের টাকা আত্দসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জোরপূর্বক এনাজুর রহমান চৌধুরী এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পদ নেন।

সমবায় অধিদফতরের একজন ঊধর্্বতন কর্মকর্তা জানান গ্রাহকদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি সমবায় অধিদফতরে জানানো হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি গত সপ্তাহে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান হাজী খবির উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরী এ ঘটনার মূল হোতা। ৮৫ বছরের বিশ্বস্ত এ প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার স্বার্ণালঙ্কার আত্দসাৎ করে লাপাত্তা রয়েছেন তিনি। চেয়ারম্যান জানান, এক মাস আগে এনাজুর রহমান চৌধুরীসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন তিনি। পুনরায় নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টে বাদী হয়ে এনাজুরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন রয়েছে। এদিকে সমবায় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ধীরেন দাস বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক নারীর সংসার ভেঙেছে। অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। প্রতারিত এসব গ্রাহক সমবায় ব্যাংকে এসে কান্নাকাটি করছেন। ভুক্তভোগীদের একজন রাজধানীর ঝিগাতলার রুবিনা আক্তার। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, 'বিপদে পইড়া আমি আমার নয় ভরি স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রাইখা ৭০ হাজার টাকা নিছিলাম। ওই টাকা সুদসহ ফেরত দেওয়ার পরও আমি আমার গহনা ফেরত পাই নাই। আমরা সাধারণ মানুষ। তাই কেউ আমাগে কথা হুনে না। এহন আমরা কই যামু?' মুগদাপাড়ার ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জমা দিয়ে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ টাক শোধ করেছেন। এরপরও গত তিন মাস ধরে তিনি তার স্বর্ণালঙ্কার ফেরত পাননি। এখন প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যবয়স্কা এক মহিলা জানান, তার মতো অনেক নারীকে স্বর্ণালঙ্কারের জন্য স্বামীর বাড়ি থেকে ফেরত আসতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর