রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
শফীর বক্তব্য জঘন্য

সিটি নির্বাচনে জিতেছেন অসৎরা : প্রধানমন্ত্রী

ওয়াজে নারীদের নিয়ে আহমদ শফীর বক্তব্যকে জঘন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হেফাজতে ইসলামের আমিরের এক ওয়াজ নিয়ে সম্প্রতি দেশব্যাপী নিন্দার ঝড়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও শনিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী সিটি নির্বাচন নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এসব নির্বাচনে জিতেছে অসৎরা।
শেখ হাসিনা বলেন, “আল্লামা শফীর একটা কথা দুই-একদিন ধরে টেলিভিশনে দেখছি। আল্লামা শফী যা বলেছেন, তা অত্যন্ত জঘন্য বলে আমি মনে করি। উনি মেয়েদের সম্পর্কে অত্যন্ত নোংরা ও জঘন্য কথা বলেছেন।” হাটহাজারীতে ওই ওয়াজের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট-গুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে এর তীব্র সমালোচনা উঠেছে। ওয়াজে আহমদ শফী নারীদের চতুর্থ শ্রেণীর বেশি পড়াতে নিষেধ করেন, সমালোচনা করেন সহশিক্ষার। নারীদের চাকরি না করে বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেন তিনি। নারীদের নিয়ে আরও যেসব কথা তিনি বলেছেন, তাও কুরুচিপূর্ণ বলে সমালোচনা উঠেছে। শেখ হাসিনা বলেন, “উনার কি মা নেই? উনি কি মায়ের পেট থেকে জন্মাননি? উনার কি বোন-স্ত্রী নেই? আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদের সম্মান তো আমাদের রক্ষা করতে হবে।” ওই ওয়াজে নারীদের পোশাক-আশাক নিয়ন্ত্রণ এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেও কথা বলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শফী। তিনি বলেন, মেয়েদের কাজ ঘরের ভেতর। তাদের কাজ স্বামীর ঘরের আসবাবপত্র দেখাশোনা করা ও ছেলে সন্তান লালন-পালন করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম প্রথম যিনি গ্রহণ করেছিলেন, তিনি একজন মহিলাই ছিলেন। ইসলাম ধর্ম প্রথম গ্রহণ করেন বিবি খাদিজা। আর কেউ সাহস করে তা করেননি। এটা ওনার (শফী) মনে রাখা উচিত ছিল। ‘ইসলাম ধর্মে যে জিহাদ হয়। সেই জিহাদে প্রথম যে শহীদ হন, তিনি বিবি সুমাইয়া।’ ‘তাদের সম্পর্কে এই নোংরা আর জঘন্য কথা বলা, আবার এই নারী নেতৃত্বকে মেনে নিয়েই’, গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করেন শেখ হাসিনা। ৪ মে বিরোধীদলীয় নেতা একটি সমাবেশ করলেন। আমাকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেন। বললেন, আমি পালানোরও পথ পাব না। আর ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ করল। তারা এক জায়গায় বসতে চাইল; আমরা কিন্তু আপত্তি করিনি। তারা শাপলা চত্বরে বসল। এর পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে আগুন দেওয়া হলো। জায়নামাজ পোড়ানো হলো। এর পর প্রতিবাদ কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) করেননি। কেউই করেননি। বায়তুল মোকাররমে হামলার সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
পাঁচ তারিখ বায়তুল মোকাররমের সামনে শত শত কোরআন শরিফ পোড়ানো হয়েছে। আমি জানি না, ইসলামের ইতিহাসে এত কোরআন শরিফ এভাবে পোড়ানো হয়েছে কিনা। কারা পুড়িয়েছে? হেফাজত আর জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। সব টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হচ্ছিল। তাদের হাত-পা ধরে হকাররা কাঁদছিল। বলছিল, আমাদের রুটি-রুজির পেটে লাথি দিয়েন না। যারা হেফাজতের আর ইসলামের নাম নিয়ে কোরআন শরিফ পোড়াল, তারা ইসলামের কি হেফাজত করবে? তারা ধর্মের এত বড় অবমাননা করে কিভাবে ধর্মকে রক্ষা করবে? মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে অরাজকতার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এসব ঘটনা ঘটিয়ে মহিলাদের সম্পর্কে এখন নোংরা কথা বলছে। উনি কি মায়ের পেট থেকে জন্মাননি? মায়ের সম্মানটুকু রাখবেন না? ওনার কি স্ত্রী নেই? তাদের সম্মান রাখবেন না? “ওনার জিবে পানি আসে। উনি যে নেত্রীর পাশে বসতেন, তাকে যদি তেঁতুল মনে করে ওনার জিবে পানি আসে, তাহলে আমার কিছু বলার নেই।

সর্বশেষ খবর