বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

ফের অনিশ্চয়তায় পদ্মা সেতু বিল না পেয়ে কাজ বন্ধ

দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। একদিকে তহবিল সংগ্রহে ভাটা, অন্যদিকে ব্যাংকিং জটিলতা ও ডলার সংকটে পরামর্শকদের বিল পরিশোধে হচ্ছে বিলম্ব। ফলে ঠিকমতো কাজ করছেন না বিদেশি পরামর্শকরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা কাজ রেখেছেন পুরোপুরি বন্ধ। ফলে দরপত্র গ্রহণ-সংক্রান্ত বিঘি্নত হচ্ছে কাজ। এ কারণে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে।

বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানে নড়েচড়ে বসেছে সেতু বিভাগ। তারা আবার বিষয়টি খোলামেলা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সেতু বিভাগের চিঠি পেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের গ্রীন রোড শাখাকে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে নির্দেশের মধ্যেই। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে নতুন কোনো আপডেট নেই। বলারও কিছু নেই। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি দেখভাল করছে সেতু বিভাগ। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য এইকম নামের যে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের অনুকূলে বৈদেশিক মুদ্রায় বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। এইকমেরই একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এ কাজ করছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে। অন্যদিকে ঠিকাদারদের সঙ্গে লেনদেন করতে যে এফসি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, এতে জমা নেই যথেষ্ট ডলার। তাই সময়মতো বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। আর বিল না পাওয়ায় সেতু বিভাগকে চিঠি দিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো। একই সঙ্গে তারা বন্ধ করে দিয়েছে এর কাজ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু করতে পারবে না এ সরকার। যদিও মূল সেতুর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এরই মধ্যে। সূত্র জানায়, সমস্যা সমাধানে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিষয়ে রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক করেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা। একই বৈঠকে ডলার-সংক্রান্ত সব ধরনের জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সেতু বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মূল সেতুর দরপত্র ক্রয় করেছে প্রাক-যোগ্য দুটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে চায়না মেজর ইঞ্জিনিয়ারিং, অন্যটি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কোম্পানি ডেলিম বেম। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন ও ভিঞ্চি-এইচসিসি জয়েন্টভেঞ্চার অব ইন্ডিয়া-ফ্রান্স নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিডিউল কিনবে বলে জানিয়েছে সরকারকে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে ২৬ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে সরকার। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন বেলা ৩টায় খোলা হবে দরপত্র। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পরিশোধ করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোলা হয়েছে পৃথক ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট।

সর্বশেষ খবর