বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

দল চাইলে পদত্যাগ করব : রনি

ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় সমালোচনার মুখে থাকা আওয়ামী লীগের এমপি গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, দল চাইলে পদত্যাগ করব। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত কর্মের জন্য দল বিব্রত হোক তা চাই না। দলের সভানেত্রী বা সাধারণ সম্পাদক যদি আমাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন তাহলে আমি পদত্যাগ করব। এ ব্যাপারে আমি দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলেছি।

গতকাল জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকালে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাম মাওলা রনি এ কথা জানান। এর আগে এমপি পদ থেকে পদত্যাগের দাবি ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে স্পিকারের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তিনি। সূত্র জানায়, গোলাম মাওলা রনি সাংবাদিক নির্যাতনসহ ওই দিনের অপ্রীতিকর ঘটনার কথা তুলে ধরে স্পিকারের কাছে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান। তিনি স্পিকারের কাছে ওই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি স্পিকারের কাছে সাংবাদিক নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে এই ঘটনার জন্য বেঙ্মিকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানকে দায়ী করেন। স্পিকারের কাছে এমপি রনি বলেন, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার লেখা প্রকাশিত হওয়ায় সালমান এফ রহমান ক্ষিপ্ত হন। এ জন্যই তাকে হয়রানি করতে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। জবাবে স্পিকার গোলাম মাওলা রনিকে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেওয়ার পরার্মশ দেন। একই সঙ্গে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করার উপদেশ দেন।

এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইংরেজিতে লেখা স্ট্যাটাসে রনি বলেন, খুব সম্ভবত আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছি। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই আমার বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে চাই। গোলাম মাওলা রনি তার স্ট্যাটাস আপলোডের এক ঘণ্টার মধ্যেই তাতে ৩০০টি লাইক, ৩৩টি শেয়ার ও অনেক মানুষের কমেন্টস পড়ে।

কমেন্টে অনেকেই তাকে পদত্যাগ করার চিন্তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। সোহেল তাজের উদাহরণ টেনে তাকে কটাক্ষও করেন কেউ কেউ। এরপরই তিনি সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন। সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে দীর্ঘ সময় ফোন রিসিভ করা থেকেও বিরত থাকেন তিনি। এর ফলে স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে গোলাম মাওলা রনি জানান, তার দল ও নির্বাচনী এলাকার জনগণ চাইলে তিনি পদত্যাগ করবেন। এ ছাড়া এমপি পদ থেকে তার পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা নেই। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) ?আসনের এমপি গোলাম মাওলা রনি বলেন, সংসদ বিব্রতবোধ করলে এবং আমাকে পদত্যাগ করতে বললে আমি তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করব। তিনি বলেন, বিতর্কের মধ্যে কখনো মনে হয়েছে পদত্যাগ করি। কখনো মনে হয়েছে করব না। এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। তাই পদত্যাগ করতে পারি বলে ফেইসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়েছিলাম। কিন্তু স্পিকার ও আমার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। তাদের পরার্মশ ও আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কথা বিবেচনা করে আমি পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেছে। তারা বিকাল ৫টায় জিডি করে। এটা আবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ আকারে কোর্টে গেছে। প্রতিপক্ষ আমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। আমাকেই উল্টো হুমকি দিয়েছে। আমি যে আদর্শ নিয়ে কথা বলেছি, তা এখানে এসে বড় ধাক্কা খেলাম।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে অসংখ্য ফোন আসছে, নেতা-কর্মীরা পদত্যাগ করার আগে তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেছেন। তারা বলেছেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবেও দলের কেউ আমাকে পদত্যাগ করতে বলেননি। বা বলেননি সালমান এফ রহমানের সঙ্গে কেন এমন ঝামেলায় জড়ালাম। তবে আমি আদালতে গিয়েছি। বিষয়টি আদালতের মাধ্যমেই সুরাহা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাম মাওলা রনি বলেন, আমি দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। দল যখনই চাইবে তখনই পদত্যাগ করব। এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে, দল কোনো রকম কথা বলেনি।

এমপি হিসেবে তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন কিনা জানতে চাইলে রনি বলেন, আমি একজন আইনপ্রণেতা ও আইনের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, আমি আইন ভঙ্গ করিনি। আত্দ রক্ষার্থে যা কিছু করা দরকার তাই করেছি।

আপনি সাংবাদিকদের মেরেছেন, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম মাওলা রনি বলেন, মেরেছি, বিষয়টি সঠিক নয়। যখন কারও ওপর আঘাত আসে, তাহলে প্রতিহত করার অধিকার সবারই আছে এবং কারও ব্যক্তিগত রুমে কেউ ঢুকে পড়লে তাকে শক্তি প্রয়োগ করে বের করার অধিকার আছে। তবে যা কিছুই ঘটেছে, আমিও ভিডিও করেছি। কোর্টের মাধ্যমেই প্রমাণ করব।

তিনি বলেন, আমি উচ্চ আদালতে আরও দুটি মামলা করব। আমার ব্যক্তিগত অফিসে ঢুকে পাইরেসি এবং সাংবাদিকদের কতটুকু আচরণ করা উচিত, আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কতটুকু থাকবে, সাংবাদিকদের কতটুকু নীতি অনুরসরণ করা উচিত- তা আদালতের রায়ের মাধ্যমেই সমাধান হবে।

সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালেন? দল থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন, সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগের অনেক বড় কিছু। অনেক প্রভাবশালী। কিন্তু আমি মনে করি তার কোনো পাওয়ার নেই, পাওয়ারলেস। তিনি কিছুই না। আমি একজন দলীয় এমপি হিসেবে যতটুকু ওন করি, উনি সেখানে জিরো। কিছুই না। শেয়ারবাজারের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কারণে আমি তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বুঝাতে চাই। জনগণ মনে করে, শেয়ারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের সঙ্গে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। কিন্তু সরকারের কোনো ব্যক্তি যদি জড়িত থাকত তাহলে তারা আমাকে এ বিষয়ে বাধা দিতেন। সে বিষয়টিই আমি বক্তৃতায়, ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি। কেউ কোনো বাধা দেননি।

সর্বশেষ খবর