শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

সেনা ছাড়াই নির্বাচন সম্ভব প্রমাণ করেছে প্রশাসন

ডিসি সম্মেলনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, আগামী নির্বাচন আসছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ছাড়াও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাসহ যেসব নির্বাচন হয়েছে সেখানে সেনাবাহিনী প্রয়োজন হয়নি। আগামী নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।

অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব এটা আপনারাই বার বার প্রমাণ করেছেন। স্থানীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছে একইভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনও হবে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে ডিসিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গতকাল আটটি কার্য অধিবেশনে ১৬টি মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এসব অধিবেশনে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতার দ্রুত নিষ্পত্তি, কৃষি জমি সুরক্ষা ও যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা। স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও একইভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই সব রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেবে। এত দৃঢ়তার কারণ কী জানতে চাইলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের প্রশাসকদের সঙ্গে ডিসি ও ইউএনওদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, উপজেলা একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। এটা সেটেল হতে সময় লাগবে। এখানে যে পর্যায়ে শুরু হয়েছিল এখন সেটা অনেক ভালো অবস্থানে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়েছি। কত লেভেল বা স্তরে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা থাকবে সেটা নিয়ে জাতীয় বিতর্ক বা সংলাপ হওয়া প্রয়োজন। আমরা এতগুলো সরকার রাখব কিনা সরকারের সংখ্যা কমাবো। কত লেভেলে স্থানীয় সরকার রাখলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ও স্থায়ী হবে এটা আমাদের ভাবতে হবে।

অর্পিত সম্পত্তি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ : দিনের প্রথম কার্য অধিবেশনে আলোচনা হয় ভূমি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়ে। ওই বৈঠক শেষে ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা সাংবাদিকদের বলেন, অর্পিত সম্পত্তি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সম্প্রতি আইন সংশোধন করে অতিরিক্তি জেলা জজ ও সেশন জজদেরও আদালত পরিচালনার ক্ষমতা এবং জেলা দায়রা জজদের আপিল নিষ্পত্তির ক্ষমতা দিচ্ছে সরকার।

যানজট হচ্ছে বড় দুর্ভাবনা : যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা যানজট নিয়ে। এর চেয়ে বড় দুর্ভাবনা আর কিছুই নেই। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যখন দেখি গাড়ির জানালা দিয়ে বিষণ্ন-বিধ্বস্ত যাত্রীরা আমার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে তখন আমি কষ্ট পাই। যখন দেখি রমজানের সময় যানবাহনের জন্য রাস্তার পাশে যাত্রীরা চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে, এ দৃশ্য আমাকে লজ্জা দেয়। অধিবেশন শেষে যোগাযোগমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কগুলোর পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদেও ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলে ভোট কমে যাবে। তবে আমি মনে করি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে যানজট এবং দুর্ঘটনা কমে যাওয়ার ফলে ভোট আরও বাড়বে। এ ছাড়া গতকাল বৈঠকে আলোচনা হয়েছে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে।

আশরাফ-মেনন বৈঠক : দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন বৈঠক করেছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বেইলি রোডে সৈয়দ আশরাফের সরকারি বাসভবনে বৈঠক হয়। প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক চলে। বৈঠকে সৈয়দ আশরাফ ও রাশেদ খান মেনন ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস ও ফজলে হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন। রাশেদ খান মেনন বৈঠকে সৈয়দ আশরাফকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এ মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। সৈয়দ আশরাফকে ১৪ দলীয় জোটকে আরও বড় করার বিষয়েও প্রস্তাব দেন রাশেদ খান মেনন। মেননের এ প্রস্তাবের উত্তরে সৈয়দ আশরাফ বলেন, আপনার এ প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করব। নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তারিখ ঠিক করব। ১৪ দলীয় জোটকে সম্প্রসারণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সময় ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস সৈয়দ আশরাফকে বলেন, এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর