বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের ভাঙচুর চট্টগ্রামে আগুন

ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধরা। একইভাবে চট্টগ্রাম বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাতজনকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে সংগঠনে ভেতরে বাইরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বড় একটি অংশও পদবঞ্চিতদের সঙ্গে গোপনে আন্দোলনে উৎসাহ জোগাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যে কোনো সময় ছাত্রদলে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিত ছাত্রনেতারা। কার্যালয়ের বিভিন্ন তলায় গিয়ে তারা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের খোঁজেন। তাদের না পেয়ে একপর্যায়ে কার্যালয়ের সামনে দাঁড়ানো দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় সেখানে পর পর চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর আগেই বিক্ষুব্ধরা নয়াপল্টন ছাড়েন।

পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, ছাত্রদলের ২৯১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে অযোগ্য, অছাত্র ও সন্ত্রাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ যোগ্যদের কমিটিতে ঠাঁই হয়নি। অবিলম্বে ত্যাগী, মেধাবী ও পরিশ্রমী নেতা-কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি ও অবমূল্যায়িতদের যথাস্থানে পদায়ন করতে হবে। এ জন্য তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন। নইলে শীঘ্রই বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাইদের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম রয়েল, আহসান উদ্দীন রুবেল, আমজাদ হোসেন জুয়েল, গোলাম আজম সৈকত, এম আর চৌধুরী মিল্টন, রুহুল ইসলাম মণি, আবদুল হাই পলাশ, মাহবুব হাসান শিকদার, সাখাওয়াত হোসাইন চয়ন, মাহবুব আলম আক্তার, আল আমিন সিদ্দিকী আকাশসহ অর্ধশত নেতা-কর্মী এই বিক্ষোভে অংশ নেন। সাঈদুর রহমান সাইদ বলেন, গত কমিটির অন্তত ২৭ জনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানাচ্ছি। এর পরও তারা কমিটি পুনর্গঠন না করলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। অবশ্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুর প্রসঙ্গে ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভঁূইয়া জুয়েল বলেন, ছাত্রদলের কেউ এটা করছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। এটা সরকারের এজেন্টদের কাজ। পদবঞ্চিতদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি কমিটিতে সবাই সুযোগ পায় না। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলেছেন পদবঞ্চিতদের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনে স্থান করে দেওয়া হবে। এদিকে বিক্ষোভ শেষে পুরানা পল্টনে সাখাওয়াত হোসাইন চয়নকে বেধড়ক পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে তিনি হাতিরপুল এলাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পদবঞ্চিত ছাত্রনেতাদের দাবি, বর্তমান কমিটির একটি অংশ চয়নকে পিটিয়েছে।

চট্টগ্রাম বিএনপি কার্যালয়ে আগুন : নতুন কমিটিতে স্থান না পেয়ে চট্টগ্রাম বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা। গতকাল বেলা আড়াইটায় এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মহানগর ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনের ভেতরে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে দুটি ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটান। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে স্থান না পেয়ে পদবঞ্চিতরা নগরীতে একটি মিছিল বের করেন। নতুন কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিলটি দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ক্ষুব্ধ অংশটি পর পর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। কার্যালয়ের সামনে টানানো বিএনপি নেতাদের ছবিসংবলিত বিভিন্ন পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর নাসিমন ভবনের ভেতরে ঢুকে ছাত্রদল কর্মীরা কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিলে আগুন ধরিয়ে দেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে আমরা সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর পরই সোয়া ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,?? যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বিএনপি বা ছাত্রদলের কেউ হতে পারে না। তারা দুষ্কৃতিকারী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়ায় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

তিন বছরেও হয়নি চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি : গত তিন বছরেও চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আহ্বায়ক কমিটিতে অছাত্র, ঠিকাদারসহ বিবাহিতদের জায়গা করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পদবঞ্চিতদের। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন তারা। যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

 

সর্বশেষ খবর