রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

'অত্যন্ত ইতিবাচক' বললেন বিশিষ্টজনরা

ব্যর্থ হলে দায় দুই নেত্রীরই

দুই নেত্রীর টেলিফোন আলাপকে ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, দুই নেত্রীর যে দেশের জনগণের উদ্বেগ নিরসনের বিষয়ে সদিচ্ছা আছে তার প্রতিফলন এই টেলিসংলাপ। তারা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ অনুসারে গণভবনে যাবেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। সেটির দিনক্ষণ আরও আলোচনার মাধ্যমে পরে নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে। কারণ সরাসরি আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিশিষ্টজনরা বলছেন, এই আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হলে দেশের অস্থিরতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তখন দায় নিতে হবে রাজনীতিবিদদেরই এবং এর সিংহভাগ বর্তাবে দুই নেত্রীর ওপর। তাই সংলাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে উভয় রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

দুই নেত্রীর মধ্যে টেলিফোন সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বহুদিন পর দুই নেত্রী, একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এটি আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়নি এবং সোমবার গণভবনে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া যাবেন কিনা তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। তবুও বলতে চাই, এ ফোনালাপের মধ্য দিয়ে জনমনে সংকট উত্তরণের একটি ক্ষীণ আশা তৈরি হয়েছে। তবে আমি বলতে চাই, দুই নেত্রীর এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বরফ গলতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, যেহেতু বহুদিন পর সংলাপের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে সে কারণে দুই নেত্রীর উচিত হবে একে অন্যের সমালোচনা না করা। তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে নেতিবাচক কথা না বলে শোভনীয় আচরণ করবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি। হাফিজ উদ্দিন খান বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে এ ব্যাপারে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংলাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ সংলাপের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। আর তিনি এ পরিবেশ তৈরির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যেন বিরোধী দলের ওপর পুলিশি নির্যাতন না চালায়, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা যেন হরতাল প্রত্যাহার করে তার জন্য আহ্বান জানান।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপ ও আমন্ত্রণ অত্যন্ত ইতিবাচক। জনগণের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও এক ধরনের প্রত্যক্ষ দাবির মধ্যেই এই টেলিসংলাপ হলো। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয় সেজন্য ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন রয়েছে। প্রয়োজনে এটি বাড়ানোও সম্ভব। এখন প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এতে বেগম খালেদা জিয়ার খোলা মন ও নমনীয় এজেন্ডা নিয়ে অংশ নেওয়া উচিত। এতে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিপর্যয় ও শঙ্কা কাটানো সম্ভব হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিরোধীদলীয় নেত্রী নিজের ডাকা হরতালের অজুহাতে এই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না। কিন্তু এ আলোচনার বাসটা যদি আমরা মিস করি তাহলে যে সংঘাত, সংকট ও জাতীয় ক্ষতি হবে তার সিংহভাগের দায় নিতে হবে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে। কারণ সরকার এখন অনেকটাই নমনীয়। তারা তো আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিরোধী নেত্রী তো এখনো জানেন না, গণভবনে সোমবার কি বলা হতো। তাই এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করা হলে তা হবে জাতির জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, এটি শুভ উদ্যোগের সূচনা। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তার বাসভবনে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সেখানে আলোচনার একটি শুভ ফলাফলের প্রত্যাশা করছি। হরতালের কারণে বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সময়ে আমন্ত্রণে যেতে অসম্মতি জানালেও এই আমন্ত্রণ কিন্তু জারি আছে। প্রধানমন্ত্রী সময় চেয়েছেন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রীরও তার নিজস্ব জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। আমি মনে করি, এখন পর্যন্ত সবই ইতিবাচক। কেউ আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেননি বা কেউ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেননি। নিশ্চয়ই শীঘ্রই দুই নেত্রী নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে জনগণের উদ্বেগ দূর করবেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পুরো দেশবাসীর মতো আমিও দুই নেত্রীর ফোনালাপের পর স্বস্তি প্রকাশ করেছি। কারণ দুই নেত্রীর সংলাপের মধ্য দিয়ে আসন্ন নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসানের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ ফোনালাপের মাধ্যমে দুই নেত্রীর সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। ২৮ অক্টোবর দুই নেত্রীর মধ্যে গণভবনে যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার আমন্ত্রণ তার মধ্য দিয়ে আমরা আশা করব, একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দলগুলোর মধ্যে আলোচনার সূত্রপাত হবে। একইভাবে সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা আরও এগিয়ে যাবে। টিআইবির এ নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সংলাপে দুই দলকেই এ কথা খেয়াল রাখতে হবে, আলোচনার মাধ্যমে কোন পক্ষের লাভ হলো বা কোন পক্ষ পরাজিত হলো তা বিবেচ্য নয়, বরং দুই দল এবং তাদের নেতা-কর্মীদের এ কথা মাথায় রাখতে হবে, আলোচনার মধ্য দিয়ে তারা যেন একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পেঁৗছতে পারেন। কারণ দেশবাসী এখন একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রধান দুই দলের দিকে তাকিয়ে আছেন। সে কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে।

সর্বশেষ খবর