দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর টেলিফোনে দুই নেত্রীর আলোচনা এবং গণভবনে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ জানানো ইতিবাচক হিসেবে দেখছে মহাজোটের শরিক দলগুলো। শরিক দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে জাতি। তারা সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার সাফল্য কামনা করেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে সংলাপের শুভসূচনা হলো। তিনি বলেন, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ নিয়ে দেশে বর্তমানে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে মারাত্দক সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ফোনালাপ একটি কার্যকর সংলাপ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় জীবনে যে সংশয়, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা এটা কোনো মানুষের কাম্য নয়। গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এ ফোনালাপ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করবে আশা করি। এ সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীও সমাধান চায়। দেশবাসী চায়, ফোনালাপের সূত্র ধরে দুই দল আন্তরিকতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বিএনপি ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসতে চায়_ এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সমাধানের একমাত্র পথ আলোচনা। দেরিতে হলেও আলোচনাতেই ফিরে আসতে হবে সবাইকে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের পক্ষে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছয় মাস আগে দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন সংলাপে বসার জন্য। তখন পরিস্থিতি এত জটিল ছিল না। তিনি বলেন, দেরি হলেও দুই নেত্রীর টেলিফোনের যোগাযোগকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই সত্যিকার অর্থে সংলাপ বাস্তবায়ন হোক। সব দল নির্বাচনে অংশ নিক। ২৮ অক্টোবর সংলাপে না এসে হরতাল কর্মসূচি শেষে বিএনপি সংলাপে আসতে চায়_ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই পক্ষেরই উচিত দেশের স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে ছাড় দিয়ে আলোচনায় বসা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি দুই নেত্রীর ফোনালাপ প্রসঙ্গে বলেছেন, ফোনালাপ ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ তো বিরোধীদলীয় নেতা নাকচই করে দিলেন মনে হলো। আসলে দাবি মানলে দাওয়াত খাবেন, এটা তো হয় না। প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ চায় ওয়ার্কার্স পার্টি : নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে সংলাপের দাবি করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। গতকাল রাজধানীর নাখালপাড়া সংসদ সদস্য ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মলি্লক, পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস, নুরুল হাসান, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, ইকবাল কবির জাহিদ, হাজেরা সুলতানা, নুর আহমদ বকুল, মনোজ সাহা, কামরুল আহসান প্রমুখ। ওয়ার্কার্স পার্টির দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শেষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন ও অন্যান্য বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব জটিলতা নিরসনের পথকে সুগম করেছে। বিরোধীদলীয় নেতাও একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তারপরও ওয়ার্কার্স পার্টি উভয় প্রস্তাব নিয়েই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পেঁৗছতে অচিরেই সংলাপের দাবি জানাচ্ছে।তিনি বলেন, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া হরতালের কর্মসূচি প্রদানের কারণ মনে হচ্ছে, তিনি এ বিষয়ে সংলাপ চান না। সরকারের বৈধতা নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে উদ্ভট ও জ্ঞান-বুদ্ধির বাইরে বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার এ অবাস্তব রাজনৈতিক অবস্থানের পরও ওয়ার্কার্স পার্টি সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান চায়। ওয়ার্কার্স পার্টি সুস্পষ্টভাবে বলতে চায়, জনগণের ভোটাধিকার প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করার কোনো প্রচেষ্টা জনগণ গ্রহণ করবে না।