রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের দলীয় পদ না থাকাই ভালো

আকবর আলি খান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব সংবিধানসম্মত। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের রুলস অব প্রসিডিউর ঠিক করতে হবে। সেই সরকার ব্যবস্থায় অংশ নেওয়া মন্ত্রীদের অবশ্যই ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে তারা কিছু করতে পারবেন না। এ ছাড়া মন্ত্রীদের দলীয় পদ না থাকলেই ভালো হবে। কেননা দলীয় পদধারী ব্যক্তি দলের বাইরে কিছু করবেন না। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত 'উদ্ভূত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে করণীয়' শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাফর আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের বদিউল আলম মজুমদার, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রমুখ। আকবর আলি খান বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা মোঘল সম্রাটের চেয়ে বেশি। এ জন্য প্রয়োজন সংবিধানের সংশোধন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। আর সরকার আসলে মিথ্যা বলে না, অর্ধসত্য কথা বলে। যেমন প্রধানমন্ত্রী সব সময় ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রে দলীয় প্রধান সরকারপ্রধান হতে পারেন না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার জন্য সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী দায়ী। কারণ এই সংশোধনী সংসদীয় বিশেষ কমিটির সুপারিশে হয়নি। এটি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মনগড়া সিদ্ধান্তে। তিনি এ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত সংবিধান সংশোধনী কমিটি ২৭টি মিটিং করে সরকারের কাছে যে সুপারিশ করেছিল, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল।

সংবিধান সংশোধনী কমিটির বিভিন্ন সদস্যের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন_ এটা সেটল ইস্যু, এটা পরিবর্তন করার দরকার নেই। আমির হোসেন আমু বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে আছে সেভাবেই রাখা উচিত। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছিলেন, সংবিধানে তিন মাস নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। অ্যাডভোকেট আমির খসরু বলেছিলেন, এমন কিছু করা ঠিক হবে না যা বিতর্ক সৃষ্টি করে। রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পরিবর্তনের দরকার নেই। বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সংশোধনের দরকার নেই। কমিটির কো-চেয়ারম্যান প্রস্তাব করে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার দরকার নেই। কিন্তু কারও কথাই শোনা হয়নি। তিনি আরও বলেন, 'সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদে যা অপরিবর্তিত রাখার বিধান করা হয়েছে এটাও অসাংবিধানিক।' তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বসে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছে। বড় দুই দলের মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। দুই দলই সংসদ বর্জন করে, দুর্নীতি করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ এখন আর দুই দলকে চায় না। তারা এখন তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, একতরফা নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা দরকার জনগণ সিদ্ধান্ত নিলে আপনাকে চলে যেতেই হবে। তিনি বলেন, দেশে কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে যা হবে তা কারও জন্যই মঙ্গল হবে না এটা বুঝতে পারছি। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ-পাকিস্তান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারেনি। আপনিও পারবেন ন। দেশে সংঘাত অনিবার্য। আর এ জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রীর জেদ। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণতন্ত্র মানে পাঁচ বছরে একবার ভোট দেওয়া নয়। দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র পাঁচ বছরের ভোটে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে। দলীয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে পাকাপোক্ত করেছে। এটা গণতন্ত্র হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর