বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

দফতর বণ্টন হয়নি নতুন মন্ত্রীদের

পুরনোরা অনেকে অফিসে যাননি কারও চোখে অশ্রু

দফতর বণ্টন হয়নি নতুন মন্ত্রীদের

দফতর বণ্টন হয়নি নতুন মন্ত্রীদের। পুরনোদের অনেকে সচিবালয়ে যাননি। কারও কারও চোখে ছিল বিদায়ের অশ্রু। একদিকে বিদায়ের কষ্ট, অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে টিকে যাওয়ার আনন্দ নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে শেষ অফিস করেছেন মহাজোট সরকারের মন্ত্রীরা। প্রজ্ঞাপন জারি হলে আজ থেকে শুরু হবে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রীদের কাজ।
রবিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে আটজন শপথ নিলেও দফতর বণ্টন না হওয়ায় তাদের কেউ সচিবালয়ে যাননি। প্রজ্ঞাপন জারির পর তারা সচিবালয়ে নিজ নিজ দফতরে যাবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার ইফতিখার হায়দার সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলেই নতুন মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন ও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া মন্ত্রীদের ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
প্রধানমন্ত্রী এখনো পর্যন্ত দফতর বদল ও প্রজ্ঞাপন জারিসহ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব যেটুকু তথ্য দিয়ে গেছে সে পর্যন্তই থমকে রয়েছে কাজের অগ্রগতি। দফতর বণ্টন বিষয়ে তিনি (সচিব) একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন গণভবনে, এখন পর্যন্ত সেটির নির্দেশ আসেনি। ওই নির্দেশ আসার পরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দ্রুততার সঙ্গে তার নিয়মমাফিক কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি। এদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না এমন মন্ত্রীদের মধ্যে সচিবালয়ে এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বিদায় নিয়েছেন চোখের জলে। বিদায় নিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদও। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারে টিকে যাওয়ার আনন্দে ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পুরনোদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম প্রমুখ গতকাল সচিবালয়ে অফিস করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর গতকালই প্রথম সচিবালয়ে যান জিএম কাদের। পুরনোদের মধ্যে আরও যারা নির্বাচনকালীন সরকারে থাকছেন তাদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিষয়টি আগেই পরিষ্কার ছিল। গতকাল জানা গেছে, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও এ যাত্রায় টিকে গেছেন। টিকে যাওয়াদের মধ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলীও রয়েছেন। আরও থাকছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী শফিক আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। তবে পুরনো হেভিওয়েট মন্ত্রীদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি থাকছেন না। গতকাল সকালেই তাদের এই না থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। না থাকার কাতারে আরও রয়েছেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দিপঙ্কর তালুকদার প্রমুখ।
কে আসছেন আর কে যাচ্ছেন নিয়ে সচিবালয়ে গুঞ্জন : নতুন পুরনো মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে গতকাল সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও ছিল গুঞ্জন। কে থাকছেন আর কে যাচ্ছেন দিনভর এই আলোচনাতেই সময় পার করেছেন তারা। নতুন মন্ত্রীদের কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন ছিল অনেকের। অনেকে আবার সংবাদকর্মীদের কাছে জানতেও চেয়েছেন নির্বাচনকালীন সরকারের 'চমক' সম্পর্কে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্যে যে চমকের কথা বলা হয়েছে সে অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে আসবে কিনা সেটি নিয়েও জিজ্ঞাসা ছিল তাদের। কেউ কেউ গণমাধ্যমের সূত্র ধরে কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্যতার কথা বলেছেন। তবে এর মাঝেও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নজর ছিল তাদের পে-স্কেলের দিকে। জানতে চেয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকার-ই কি তাদের পে-স্কেল দিয়ে যাবে, নাকি নতুন সরকারের জন্য অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হবে।
চোখের জলে বিদায় রাজ্জাকের : দীর্ঘ পাঁচ বছরের কর্মস্থল ছেড়ে গতকালই চলে যেতে হবে এটি জানতেন না খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। গতকাল সকালেও কর্মস্থলে এসেছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। তবে তার সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শেষে চোখের জলে নিজ কর্মস্থল ছাড়লেন। গণমাধ্যমে খবর ও বিভিন্ন সূত্রে জানতেন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে আরও কিছুদিন মন্ত্রিত্ব করার কথা ছিল তার। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, নিরাপদ খাদ্য আইন করাসহ নিজ মন্ত্রণালয়ের বিগত দিনগুলোর সাফল্যও তাকে আত্দবিশ্বাসী করেছিল। তবে এসব কিছু তার মন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে পারেনি। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার নাটকীয় ঘটনায় শেষ মুহূর্তের বলি হন তিনি। বিষয়টি তিনি নিজেও স্বীকার করেন। কর্মকর্তাদের দেওয়া বিদায়ী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত এক-দেড় মাস ধরে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে সর্বদলীয় সরকারে আমি থাকছি। এটাতে আমি খারাপ দেখছি না, বরং আমার প্রতি গণমাধ্যমের ভালোবাসা ও আস্থার প্রকাশ ঘটেছে। যাই হোক এ সিদ্ধান্ত এসেছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের কাজ হলো রাজনীতি করা। রাজনীতিবিদ হিসেবে এখন আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এমপি হওয়ার।

সর্বশেষ খবর