বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
পটুয়াখালীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

একটি মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে

একটি মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বহুপ্রতীক্ষিত পায়রা সমুদ্রবন্দরের যাত্রা শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ চ্যানেলে স্বাধীনতার পর দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর এবং প্রথম এ ধরনের কোনো বন্দর উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর আজ এক নতুন সমুদ্রবন্দরের যাত্রা শুরু হলো। এ দিনটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মহাপ্রশান্তির দিন। তিনি অনুষ্ঠানে উড্ডয়ন সুবিধাসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক বিএনএস শের-ই-বাংলা নৌ ঘাঁটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পায়রাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী রামনাবাদ চ্যানেলে বিএনএস শের-ই-বাংলা পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, পায়রা বন্দর দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, হুইপ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং সরকারি-বেসরকারি নৌ খাতসহ বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য শক্তিশালী মেরিটাইম সেক্টর গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন এবং সাবমেরিন, এয়ারক্রাফট ও নতুন ভেসেল সংগ্রহের জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিএনএস শের-ই-বাংলার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন এ ঘাঁটি থেকে সুন্দরবন ও পাশের এলাকার ডাকাতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়া পেঁৗছালে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (সিপিএ) রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ তাকে অভ্যর্থনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বরগুনার বামনা ও তালতলী এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পৃথক জনসভায় দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আরও একবার নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এতে মদদ দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তারা অকারণে হরতাল দিয়ে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই কৃষকের সুবিধার জন্য কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত ধর্মের নামে রাজনীতি করে, আবার জাতীয় মসজিদে কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। এটা কোন ধরনের রাজনীতি? প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। বিএনপি-জামায়াত সে বিচারকে বানচাল করার জন্য দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে দেশে-বিদেশে চাকরির সুযোগ পায় সে জন্য তাদের সনদপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরগুনার বামনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বামনায় জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তৃতীয় সমুদ্রবন্দরসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বিকাল ৩টার দিকে কলাপাড়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে বরগুনার তালতলী উপজেলায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন ও নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক জমাদ্দারের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রমুখ।

 

 

সর্বশেষ খবর