বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

ঢাকায় মোজেনার দুই বছর

ঢাকায় মোজেনার দুই বছর

মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা গতকাল ঢাকায় তার দুই বছর পূর্ণ করেছেন। ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর দায়িত্ব পালন শুরু করা এ কূটনীতিক নানা ঘটনায় আলোচিতও হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিষয়ে আত্দবিশ্বাসী মোজেনা সংকট নিরসনে সবসময় আলোচনা বা সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। গতকালও বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বাইরের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

রাজধানীতে একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে আবারও তার উচ্চাশার কথা বলেন। জানিয়েছেন, কিছু জেলা এখনো তার ভ্রমণ বাকি। রিকশা ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক লুঙ্গিকে পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রাখা মোজেনা কিছু বাংলাও শিখেছেন। তবে কূটনৈতিক ধারার বাইরে গিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে যাওয়া নিয়ে সমালোচনাও কম নয়। বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপড়েনের সূত্র ধরে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া মোজেনা পুরো দুই বছরই ছিলেন ঢাকায় সবচেয়ে ক্ষমতাধর কূটনীতিক। রাজনৈতিক সংকট নিয়েও চলমান কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে তিনি একাই একটি বিশাল কূটনীতিক অংশের বিপরীত মত ধারণ করছেন। সংলাপ, সব দলের অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের জনগণের আশার ওপরই দৃঢ় অবস্থান রেখেছেন। মোজেনা গতকালের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদেরই সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান করতে হবে। এ জন্য বাইরের কোনো দেশের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। আমি আশা করি, রাজনীতিবিদরা শীঘ্রই সংকটের একটি সমাধানে পৌঁছবেন। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই সমাধানে আসবেন।' যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের তিন দিনের ঢাকা সফরের পরদিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত এই মন্তব্য করলেন। তিনি বলেছেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসতেই হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশের জনগণের প্রত্যাশামতো নির্বাচন করতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা অবশ্যই আলোচনা করবেন।' অ্যামচেমের সভাপতি আফতাব উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোজেনা। ২০১১ সালের ১৩ মে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সে বছরই ১৮ অক্টোবর সিনেট রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার মনোনয়ন নিশ্চিত করে। পরে ৭ নভেম্বর শপথ গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের একজন সদস্য হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের হয়ে তিনি ইসলামাবাদ, কিনশাসা, লুসাকা ও নয়াদিল্লিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ড্যান মোজেনা ২০০৮-২০১০ সাল পর্যন্ত অ্যাঙ্গোলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা বিষয়ক দফতরের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ওই দফতরের পরিচালক হিসেবে তিনি এইচআইভি/এইডস বিরোধীসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য নীতিনির্ধারণী ভূমিকা রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আইওয়ার একটি দুগ্ধ খামারি পরিবারে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা মোজেনা জীবনের প্রথম দুই দশক কাটান গৃহস্থালির প্রাত্যহিক কাজকর্ম করে। শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামে একটি এক কক্ষবিশিষ্ট স্কুলে, যেখানে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সাকুল্যে ছাত্র ছিল মাত্র ১২ জন। পরে তিনি আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে এবং পরবর্তীতে ম্যাডিসনের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে জনপ্রশাসন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। মোজেনার স্ত্রী গ্রেস একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাক-প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা।

 

 

সর্বশেষ খবর