মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

তফসিল স্থগিত করে সমঝোতায় আসুন

তফসিল স্থগিত করে সমঝোতায় আসুন

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল স্থগিতের আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়ে বিশেষ দলের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে ঘোষিত তফসিল স্থগিত করুন। প্রহসনের নির্বাচনে জড়িত না হওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেভাবেই হোক আপনারা এখনো ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে রয়েছেন। উৎপীড়ন ও নিপীড়ন ছেড়ে এখনো সমঝোতার পথে আসুন। চক্রান্ত ও অন্তর্ঘাতের পথ পরিত্যাগ করে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। নিজেরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় থেকে বিরোধী দলকে তাড়া করে ফিরছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় দলীয় সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র অবস্থায় রাজপথে নামিয়ে আমাদের কার্যালয় অবরুদ্ধ রেখে বিরোধী দলকে মাঠে নামার আহবান জানাচ্ছেন। আর দাবি করছেন, দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে। এটা কেউ মেনে নেবে না। গতকাল রাতে প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'আমি গত পাঁচ বছর ধরে উৎপীড়িত ও ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানাচ্ছি। জনগণের ন্যায়সঙ্গত কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত ও অতি নিকটবর্তী।' ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, আমি বিস্মিত, হতবাক, ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত। চরম আক্রমণাত্দক স্বৈরশাসকের কবল থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলন গড়ে তুলেছে। সে আন্দোলনে অজ্ঞাত পরিচয়ে দুর্বৃত্তরা নিরীহ মানুষের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়ে তাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। যাত্রীবাহী বাসে বোমা মেরে, আগুন দিয়ে নাগরিকের জীবন দগ্ধ করছে। বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা এই জঘন্যতম হামলার শিকার হচ্ছে। অগ্নিদগ্ধরা হাসপাতালে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এসব বর্বর ও নিষ্ঠুর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মূল অপরাধীরা ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়া ও ঘটনাস্থল থেকে একজনও গ্রেফতার না হওয়ার রহস্য কারও কাছে বোধগম্য নয়। 
তিনি বলেন, একদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এসব কথা থেকে পরিষ্কার হয় যে, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নাশকতার ঘটনায় মূল অপরাধীদের শনাক্ত না করে বিনা তথ্যপ্রমাণে বিরোধী দলের নেতাদের হুকুমের আসামি করা হচ্ছে। এটা থেকে স্পষ্ট, মামলা দায়ের, নেতাদের গ্রেফতার ও আন্দোলন দমন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জনমতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশেই সুপরিকল্পিত নৃশংস তৎপরতা চালানো হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের জবানবন্দি থেকে দেশবাসী জেনেছেন, গার্মেন্ট শিল্পে নাশকতার সঙ্গে তারাই জড়িত সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত ওইসব নেতারা নানাভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় ছিলেন। একতরফা প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের মনোনয়ন দিয়েছে। বিরোধী দলের আন্দোলনের পাশাপাশি চলমান অন্তর্ঘাত, নাশকতামূলক কার্যকলাপ ও গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের তৎপরতার ধরনের সঙ্গে আগেকার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস হুবহু মিলে যায়। এসব ধ্বংসযজ্ঞের মূল হোতাও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। বেগম জিয়া বলেন, দলের পক্ষে কথা বলার জন্য যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাকেই মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা করে যে পন্থায় মধ্যরাতের পর যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে গ্রেফতার এবং অফিসে ভাঙচুর ও লুণ্ঠন করা হয়েছে, তা হানাদার বাহিনীর আক্রমণের কথাই মনে করিয়ে দেয় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। এরপর আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দলের পক্ষে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। 
মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন আত্দগোপনে থেকে দলের বক্তব্য নানা রকম ঘুরপথে প্রচারের জন্য এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমি বিরোধী দলের নেতা। অথচ গুলশানে আমার অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পর্যন্ত পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তৎপরতার কারণে চলতে পারছে না। আমার বিশেষ সহকারীকে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যরাও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। তিনি বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও সরকারের সমালোচনার দায়ে অনেকগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র বন্ধ রেখে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম ও শাসক দলের সমর্থনপুষ্ট কিছু গণমাধ্যমকে দিয়েও আজ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভিন্নমত দমনের মাধ্যমে দেশে ভারসাম্যহীন এক অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর