মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

নির্বাচন বাংলাদেশে আর রক্তচাপ বাড়ছে ভারতের

ঋতুপর্ণা রায়, নয়াদিল্লি থেকে

নির্বাচন বাংলাদেশে আর রক্তচাপ বাড়ছে ভারতের

বাংলাদেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রক্তচাপ বাড়ছে ভারতের। সাউথ ব্লক সূত্রে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি সে দেশে শক্তিশালী হচ্ছে প্রায় শতাধিক মৌলবাদী ইসলামিক সংগঠন। বিপুল পুঁজির সাহায্যে শুধু বাংলাদেশেই যে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাই-ই নয়, সীমান্ত দিয়ে ভারতেও সন্ত্রাস পাচারে আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি।

গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং ভোটের মুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী কাল ঢাকায় যাওয়ার কথা পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহের। ভারত এ কথাই ঢাকাকে বোঝাতে চাইছে, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য একটা শেষ চেষ্টা করবে ভারত। আগামী ৫ তারিখ শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। গোড়াতেই ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তিটি লোকসভায় পেশ করবে সরকার। এ ব্যাপারে বিজেপির সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ চুক্তি শেষ পর্যন্ত পাস করানো যাবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এড়িয়ে দুই দেশের সেচ মন্ত্রকের মধ্যে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করে দেওয়া যায় কিনা- সেই সম্ভাবনাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতের উদ্বেগের একটা বড় কারণ, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠন যেভাবে নাশকতা শুরু করেছে তার একটা প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে। বাংলাদেশের লাগোয়া সীমান্তের ২৫ শতাংশে এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ মর্মে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্তে ১০ শতাংশ বাড়তি জওয়ান মোতায়েন করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএসএফ কর্তারা। বিএসএফের ডিজি (পূর্বাঞ্চল) বংশীধর শর্মা বলেন, 'ঢাকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। সুতরাং যা করার দুই দেশের সীমান্তরক্ষাবাহিনী একসঙ্গে করবে। আমরা সমন্বয় রেখে নজরদারির মাত্রা বাড়াচ্ছি।'

নয়াদিল্লির এতটা উদ্বেগের কারণ, ভারতের কাছে খবর, ইসলামিক সংগঠনগুলোকে হিংসায় মদদ দিতে একটি আন্তর্জাতিক পুঁজি সক্রিয়। সৌদি আরব বিভিন্ন ইসলামিক ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে। রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করার কাজ চলছে। যার মধ্যে রয়েছে যেমন- বেশকিছু ইসলামিক ব্যাংক, তেমনই রয়েছে বহু হাসপাতালও। এই হাসপাতালগুলো বকলমে জামায়াত পরিচালিত। যার মধ্যে রয়েছে আল মাগরিব আই হসপিটাল, বাংলাদেশ আই অ্যান্ড চেস্ট হসপিটাল, ক্রেসেন্ডো গ্যাস্ট্রো লিভার অ্যান্ড জেনারেল হসপিটাল, ইসলামিক ব্যাংক হসপিটাল, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিস, আদ দ্বীন হসপিটাল প্রভৃতি। অন্য যে সংস্থাগুলো জামায়াত তথা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে অর্থ দিচ্ছে সেই তালিকায় রয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, সিলেটের আর হামরা শপিং সেন্টার, কেয়ারি গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থা, ইসলামিক ব্যাংক ক্রাফটস অ্যান্ড ফ্যাশন সংস্থা ইত্যাদি। জামায়াত নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার জন্য যে টাকা লাগে তা সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে ওঠে। সেই চাঁদার পরিমাণ মাসে ১০ কোটি টাকা! কোনো বিদেশি রাষ্ট্র থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। অথচ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ১৯৮০ সাল থেকেই একটি সুবিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা এবং করপোরেট সংস্থার 'করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি' খাতের বাজেট পুরোটাই খরচ হয় মৌলবাদী সংগঠনগুলোর আদর্শগত প্রশিক্ষণের জন্য। এ ছাড়া সংগঠনগুলোর কর্মীদের 'প্রকৃত ইসলামিক পরিবেশে' জীবিকার ব্যবস্থাও করে দেয় এ সংস্থাগুলো। রিপোর্টে একটি বিস্তারিত তালিকাও রয়েছে, যেখানে জামায়াতসহ ইসলামিক সংগঠনগুলোর ক্যাডাররা অস্ত্রসহ গোপনে আশ্রয় নিচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রায় ২৭০টি এমন এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মিরপুর, চকবাজার থানা এলাকা, ৮৮, হাজী আবদুল মজিদ লেন ইত্যাদি। মোট ১০৮টি ইসলামিক সংগঠনের কথা বলা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে উগ্র হিংসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে জামায়াত ছাড়াও রয়েছে আফগানি পরিষদ, ইসলামী বিপ্লব পরিষদ, ইসলামী জিহাদ গ্রুপ, জাগ্রত জনতা, মুজাহাদিন তায়েব, রোহিঙ্গিয়া ইসলামিক ফ্রন্ট, রোহিঙ্গিয়া প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট ইত্যাদি। নির্বাচনের আগে জামায়াতের আক্রমণ মারাত্দক হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা করছে ভারত। রিপোর্টে এক বিএনপি নেতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ক্যাডারদের বিশেষভাবে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে ফিদায়ে আক্রমণ এবং আত্দাহুতির জন্য প্রস্তুত থাকা ক্যাডারও। সেসব পরিবারকে যাতে আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ মদদ দেওয়া হয়, সে জন্যও তৈরি জামায়াতের নেতারা।

 

 

 

সর্বশেষ খবর