মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
নিরাপত্তা চান গার্মেন্ট মালিকরা

হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ, দেখা দেননি খালেদা

তৈরি পোশাকশিল্পে সহিংসতা বন্ধ ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ শিল্পের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে পারলেও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাননি ব্যবসায়ী নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টানা দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সোমবার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে গণভবন থেকে বেরিয়ে আসেন ব্যবসায়ী নেতারা। গণভবন থেকে বেরিয়েই তারা বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের দিকে যান। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও বিএনপি নেত্রীর দেখা ব্যবসায়ীরা পাননি বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, 'বিরোধী দলের নেতা তখন তার কার্যালয়ে ছিলেন না। তাই ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তার দেখা হয়নি।' তবে ব্যবসায়ী নেতারা তাদের দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দিয়ে গেছেন। তা বিরোধীদলীয় নেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান সাবিহ উদ্দিন আহমদ। বিজিএমইএ সভাপতি এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যবসায়ী দল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে এসে দফতরে থাকা নেতাদের তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানান। কিন্তু তারা জবাবে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা কার্যালয়ে নেই। কিছু সময় অপেক্ষার পর ব্যবসায়ী নেতারা একটি স্মারকলিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমদের কাছে তুলে দেন। স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ী নেতারা পোশাকশিল্পের নিরাপত্তা এবং এ শিল্পকে হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। আতিকুল ইসলাম জানান, পরে সময়-সুযোগমতো খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন ব্যবসায়ীরা।
এর আগে গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানমালের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। গতকাল রাতে তারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে এক মতবিনিময় সভায় তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেত্রীর কাছে জোড় মিনতি করে বলেছেন, আপনারা হঠকারী ও আত্মঘাতী রাজনীতি বন্ধ করুন। দুই নেত্রীর সমঝোতা না হলে অর্থনীতি ধ্বংস হবে। সহিংস রাজনীতির পরিবর্তন না হলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে না। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দাবিতে আগামীকাল দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। গার্মেন্ট মালিকদের প্রতিনিধি দল বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রতিনিধি দল বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের জরুরি মতবিনিময় সভার আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও সাধারণ গার্মেন্ট মালিকরা এসব কথা বলেন। দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম।
আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে সাধারণ গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা পোশাকশিল্প মালিকরা রাজনীতির বলি বা পাঁঠা হতে চাই না। স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানার নাশকতায় বায়াররা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। আমরা যেহেতু শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নিচ্ছি তাই রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য পোশাকশিল্পে আর্থিক ক্ষতি হওয়ার উত্তর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দিতে হবে।
এ সময় বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সবুর খান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, আবদুস সালাম মুর্শেদী ও সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং পুলিশের ডিআইজি মো. আছাদুজ্জামান বক্তব্য দেন।
পরে জরুরি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী বিজিএমইএ কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে মিছিলটিকে ফার্মগেট এলাকায় পুলিশ আটকে দেয়। পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা বাকবিতণ্ডার পর ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে যায়।

সর্বশেষ খবর