শিরোনাম
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনে নতুন ইতিহাস, ভোট ছাড়াই ১৫১ জয়ী

নির্বাচনে নতুন ইতিহাস,  ভোট ছাড়াই ১৫১ জয়ী

দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নতুন নজির সৃষ্টি হলো। বিগত সব নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড ভাঙতে চলল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষে এ পর্যন্ত ১৫১ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বলে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা জানিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২৭, জাতীয় পার্টির ১৮, জাসদের ৩, ওয়ার্কার্স পার্টির ২ ও জাতীয় পার্টি-জেপির ১টি আসনে একক প্রার্থী রয়েছে। অর্থাৎ সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের এককভাবে প্রয়োজন আর মাত্র ২৪ আসন। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নাম নেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের তালিকায়। ইসির প্রাথমিক তথ্য মতে, সারা দেশের ২৯৭ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ১৪৯, আওয়ামী লীগ ৪৪, জাসদ-জেএসডি ১৯, জাতীয় পার্টি-জেপি ১৫, ইসলামিক ফ্রন্ট ১০, ওয়ার্কার্স পার্টি ৭, তরীকত ফেডারেশন ৬, বিএনএফ ৬, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি ৪, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৩, খেলাফত মজলিশ ২, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১ ও স্বতন্ত্র ৩১ জন।
বহুল আলোচিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ৪৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে ১১, জিয়াউর রহমানের আমলে ১১, এরশাদের আমলে ১৮ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাতিল নবম সংসদে ১৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কটি দল ও কজন প্রতিদ্বন্দ্বী, সে তালিকা চূড়ান্ত হবে আজ। একাধিক প্রার্থীর আসনে ৫ জানুয়ারি ভোট হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মেনে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। তবে এসব প্রার্থীর গেজেট ৫ জানুয়ারি ভোটের পর একসঙ্গে প্রকাশ করা হতে পারে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা জয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে ১১৬ জনের নামের তালিকা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী অবশিষ্টদের তালিকা আজ দেওয়া হলো। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের নীলফামারী-২ আসাদুজ্জামান নূর, নওগাঁ-১ সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ মো. শহীদুজ্জামান সরকার, রাজশাহী-৫ মো. আবদুল ওয়াদুদ, পাবনা-২ খন্দকার আজিজুল হক আরজু, পাবনা-৪ শামসুর রহমান শরীফ, পাবনা-৫ গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা-৪ এস এম মোস্তফা রশিদী, খুলনা-৫ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, খুলনা-৬ শেখ মো. নুরুল হক, সাতক্ষীরা-৩ আ ফ ম রহুল হক, সাতক্ষীরা-৪ এইচ এম জগলুল হায়দার, পটুয়াখালী-২ আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৪ মো. মাহবুবুর রহমান, নেত্রকোনা-৪ রেবেকা মমিন, নেত্রকোনা-৫ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১১ এ কে এম রহমত উল্লাহ, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪ মো. আসলামুল হক, সিলেট-৩ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, সিলেট-৬ নুরুল ইসলাম নাহিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ এ বি তাজুল ইসলাম, নোয়াখালী-১ এইচ এম ইব্রাহীম, চট্টগ্রাম-১ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৬ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ মো. আফছারুল আমীন, চট্টগ্রাম-১৪ মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
জাতীয় পার্টির বগুড়া-৬ মো. নূরুল ইসলাম ওমর, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কঙ্বাজার-১ মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা-৮ রাশেদ খান মেনন ও জাসদের কুষ্টিয়া-২ হাসানুল হক ইনু, চট্টগ্রাম-৮ মঈন উদ্দীন খান বাদল ও ফেনী-১ শিরীন আখতার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১৬টি দল। এগুলো হলো আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ।
লাঙ্গল প্রতীক পেল জাপা : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের অনুরোধ সত্ত্বেও জাপার প্রার্থীদের লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরশাদ কাউকে লাঙ্গল প্রতীক না দিতে ইসিতে যে চিঠি দিয়েছেন সে সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লার রহমান (ঢাকা রিটার্নিং অফিসার) বলেন, এসব কথা বলে বিব্রত করবেন না। শনিবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দ সম্পর্কে বলেন, শনিবার ৮টি আসনে ২৩ জন প্রার্থীকে প্রতীক দেওয়া হয়েছে। আর ৭টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচন বন্ধের আইনি জটিলতা দেখা যায়নি : আবু হাফিজ
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫১ জন নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এর গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, নির্বাচন একটি লম্বা প্রসেস তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের জন্য এমন কোনো আইনি জটিলতা দেখা দেয়নি। এখন আমরা মাঝপথে আছি নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হলে সব কিছু বলা যাবে। গতকাল সন্ধ্যায় শেরেবাংলানগরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোট বাতিলের সুযোগ আছে কি না- এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'কমিশনের সামনে এমন কোনো আইনি জটিলতা আসেনি যে নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের মাঝপথে এসে এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।' রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থিতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটি আইনি প্রক্রিয়ায় হয়েছে। তবে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ভালো বলতে পারবেন।' এরশাদ আটক ও প্রার্থীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এরশাদের আটকের বিষয়টি আমার জানা নেই'। সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে আবু হাফিজ বলেন, 'প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন করা হবে। সবাই যাতে নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

সর্বশেষ খবর