বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

এরশাদের দোয়া নিয়ে রওশন বিরোধীদলীয় নেতা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক

এরশাদের দোয়া নিয়ে রওশন বিরোধীদলীয় নেতা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দোয়া নিয়ে দশম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন বেগম রওশন এরশাদ। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। কে হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা প্রশ্নে পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ বলেন, 'উনি (এরশাদ) বলেছেন তুমিই হও, আমি দোয়া করছি। আমাদের দলের চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি (এরশাদ) দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, এখন বিরোধীদলীয় নেতা হতে চাচ্ছেন না। উনি বলেছেন, তুমিই বিরোধীদলীয় নেতা হও। আমার দোয়া তোমার সঙ্গে থাকল'। এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, পার্টির সংসদীয় সভায় আমরা সর্বসম্মতভাবে ম্যাডামকে (রওশন) বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত করেছি। 
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের পর গতকাল বিকালে সংসদ ভবনে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ। এ সময় মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙা, সেলিম উদ্দিনসহ নবনির্বাচিত এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ আরও বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিশ্বাস করে। নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো পথ নেই। এজন্য পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরামর্শেই দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আগামীকাল (আজ) জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা শপথ নিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, নব নির্বাচিত এমপি হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদও শপথ নেবেন। তবে কালই (আজই) শপথ নিবেন কিনা এমন প্রশ্নে রওশন এরশাদ বলেন, তিনি (এরশাদ) শপথ নেবেন এটি আমরা জানি। কাল (আজ) হোক বা পরে। এরশাদ প্রসঙ্গে রওশন আরও বলেন, উনি সব সময়ই আমাদের সঙ্গে আছেন। আমাদের নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিচ্ছেন। উনার নির্দেশেই আমরা কাজ করছি। শরীর ভালো নয় বলে এরশাদ হাসপাতালে আছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, উনার শরীর এখন কিছুটা ভালো। আশা করছি ২/১ দিনের মধ্যে ডাক্তার তাকে ছেড়ে দেবেন। দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রওশন এরশাদ বলেন, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন। জীবনে প্রথমবারের মতো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেও রওশন এরশাদ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেন। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কি ভূমিকা রাখবে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিরোধী দল মানে বিরোধী দলই। জাতীয় পার্টি সে ভূমিকাই রাখবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একমত হওয়া গেলে মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এর আগে তিনি বলেন, প্রধান দুই দলকে এক সঙ্গে বসতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধানে আসতে পারি। এজন্য দুই দলকে অবশ্যই আলোচনায় বসতে হবে। সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। না হলে দেশ চলবে কীভাবে? দেশে যেভাবে হরতাল-অবরোধ চলছে তা কাম্য নয় উল্লেখ করে তিনি এ সময় সংঘাতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন বিনা দোষে আমাদের ভুলের কারণে আজ এতোগুলো প্রাণ চলে গেল।
আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহবান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে আজ আমরা এখানে এসেছি। নির্বাচন ছাড়া সরকার বদলের আর কোনো পন্থা জাতীয় পার্টির জানা নেই। অন্য পন্থায় সরকার পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান স্থগিত করে আসতে হয়। জাতীয় পার্টি তা চায়নি। কারণ আমরা নির্বাচনমুখী দল। ২০০১ সালে অবৈধভাবে পার্টির চেয়ারম্যানের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়নি জাতীয় পার্টি। ১৯৯১ ও '৯৬ সালে কারাগারে থেকেই পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে গিয়েছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য। আমাদের নির্বাচনে আসতে হয়েছে দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। এর আগে দেশ একটি ক্রান্তিকাল পার করছিল। সন্ত্রাস-অবরোধ-হরতাল বিভিন্নভাবে আমাদের দেশে সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা সহিংসতায় বিপন্ন। মানুষের জীবন আজ নিরাপত্তাহীন। এ অবস্থা অব্যাহত থাক, তা আমরা চাই না। তিনি বলেন, সংঘাত ও সহিংসতার কর্মসূচি পরিহার করে আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে চলমান অচলাবস্থার অবসান চায় জাতীয় পার্টি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের বৈঠক
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। গতকাল রাতে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু বৈঠকে অংশ নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বেগম রওশন এরশাদ দলের প্রধান এরশাদের দোয়া নিয়ে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন বলে ঘোষণা দেন। এরপর তিনি রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দলের নেতাদের মধ্যে সরকার গঠন, মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এরশাদ আজ শপথ নিচ্ছেন : জাতীয় পার্টির একটি সূত্রে জানা গেছে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আজকেই শপথ নিবেন। বিষয়টি গতকাল রাতে চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সর্বশেষ খবর