শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

চার জেলায় বাড়ি মন্দির সম্পদে আগুন, আতঙ্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরও বাড়িঘর, মন্দির ও সম্পদে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জয়পুরহাটে আগুনের দৃশ্য দেখে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। জেলায় জেলায় ভীতির মধ্যে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। আতঙ্ক কাটেনি হামলার শিকার পরিবারগুলোতে।

মঙ্গলবার রাত ও গতকাল অন্তত চার জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহায়-সম্পদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। জয়পুরহাট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারটি বাড়ি ও নেত্রকোনায় মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে। জামালপুরে আদিবাসী পরিবারের ওপর হামলায় সাতজন আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় একজনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যশোরের মালোপাড়ায় হামলার পর ভয়ে রাতে বাড়ি থাকছে না মেয়েরা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৫ জানুয়ারি। ওইদিন থেকে আবারও হামলার শিকার হন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। মূল হোতারা গ্রেফতার হচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-

জয়পুরহাট : পাঁচবিবি উপজেলার সোনাকুল গ্রামে মঙ্গলবার রাতে সুজেন চন্দ্র দাসের বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সুজেন এ ঘটনা দেখে আতঙ্কে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। প্রায় একই সময়ে সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে সুকুমারের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এক ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। অন্যদিকে পাঁচবিবি বাজারে বিরোধী দলের এক সমর্থকের দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে।

নেত্রকোনা : কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের অনিল বিশ্বাসের বাড়ির কালীমন্দিরে মঙ্গলবার রাতে আগুন দেওয়া হয়। এতে ছামিয়ানা ও নাগিনী যুগিনী প্রতিমার চুল পুড়ে গেছে। নবনির্বাচিত এমপি ছবি বিশ্বাস, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন খান ও ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।'

দিনাজপুর : ভোট দিয়ে ফেরার পর সদরের কর্ণাই গ্রামে বিএনপি-জামায়াতের হামলায় চার শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ১৮-দলীয় জোটের জেলা নেতারা। জেল রোডে দলের কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান মিন্টু জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, 'গত ৬ ও ৭ জানুয়াারি মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ বানোয়াট। সেখানে কোনো বাড়িতে হামলা বা আগুন দেওয়া হয়নি। কর্ণাই বাজারে ১০ থেকে ১৫টি দোকান ছিল, সেগুলোই পুড়েছে। ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয়। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।' এদিকে বাড়ি-দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সদরের এমপি ইকবালুর রহিমের পক্ষে কম্বল বিতরণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নবীনগর পৌর এলাকায় মঙ্গলবার রাতে চারটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, পশ্চিমপাড়ায় প্রদীপ সেন ও রতন বণিকের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তারা এর আগে চাঁদা দাবি করে একটি চিঠিও দিয়ে যায়। অন্যদিকে পদ্মপাড়ার রঞ্জিত সাহা ও লতিফ মিয়ার বাড়িতেও একই রাতে আগুন দেওয়া হয়। এএসপি শফিউর রহমান ও নবীনগর থানার ওসি আবু জাফর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমর দাস জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পটুয়াখালী : কলাপাড়ায় জমি দখল করতে পত্রিকা হকার মাখনলাল বিশ্বাসকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি এ ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন। মাখনলাল উপজেলার পাখিমারা বাজারে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'একই গ্রামের রওশন আরা, কুমিরমারা গ্রামের ইদ্রিস খলিফা ও আবুল কালাম হাওলাদার জমি দখল করতে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এ চক্রটি সম্প্রতি বাড়ির গাছপালা কাটতে শুরু করে। বাধা দিলে তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে। পুলিশের এসআই জহির ঘটনাস্থলে গিয়ে রওশন আরাকে নিবৃত করেন। পুলিশ সেখান থেকে আসার পরে বাড়িঘরে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে উচ্ছেদেরও হুমকি দেওয়া হয়।' কলাপাড়া থানার ওসি কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, 'এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।'

গাইবান্ধা : কুপতলা ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা গ্রামে সোম ও মঙ্গলবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুটি বাড়ি ও পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। লিটন ডাক্তারসহ সাতজনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামি করে গতকাল গাইবান্ধা থানায় এ মামলা দায়ের করেন হামলায় আহত ননীগোপাল কর্মকার। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আক্রান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ওসি গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী। হামলার শিকার পরিমল বর্মন বলেন, 'আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনরাত কাটাচ্ছি।'

জামালপুর : সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভাগড়া গ্রামে এক আদিবাসী পরিবারের ওপর হামলা ও ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। জামালপুর দয়াময়ী মন্দির কমপ্লেক্সে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএনপির একটি চক্র ওই গ্রামের গারো আদিবাসী পলিনুস সাংমার পরিবারের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অজুহাত তুলে মঙ্গলবার পরিবারটির ওপর হামলা চালায়। বিএনপি ক্যাডাররা পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। হামলায় পলিনুস সাংমাসহ সাতজন আহত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিষদের নেতা সুকুমার চৌধুরী।

যশোর : নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার শিকার অভয়নগর উপজেলার চাপাতলা মালোপাড়ার বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটেনি। ভোটের দিন সন্ধ্যায় মালোপাড়ায় অর্ধশত বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ গতকাল পর্যন্ত ২৬ জনকে আটক করেছে। ঘটনাস্থলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে, যেখানে পুলিশের ২২ জন সদস্য রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কম্বল, চাল, টিন ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। মালোপাড়ার বাসিন্দা তরুণ বিশ্বাস বলেন, 'হামলার আগে দুর্বৃত্তরা বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়। সন্ধ্যার পর পুরো গ্রামে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পুলিশ যে ক্যাম্প বসিয়েছে, সেখানেও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সন্ধ্যার পর পুলিশ সদস্যরাই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন।' মালতি বর্মণ বলেন, 'ভয়ে মেয়েদের বাড়ি আনতে পারছি না। পাশের গ্রামে আত্দীয়ের বাড়িতে রেখে দিয়েছি।' অস্থায়ী ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই ফকির তাইজুর রহমান বলেন, 'নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।'

গাজীপুর : সারা দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জেলা আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের রাজবাড়ি রোডে গতকাল বিকালে এ কর্মসূচিতে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুদীপ চক্রবর্তী ছাড়াও অংশ নেন ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, সুস্মিতা সরকার, লিটন সরকার প্রমুখ।

সিলেট : মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে মুক্তমনা ও প্রগতিবাদী সংগঠন 'জাতীয় স্বার্থে আমরা তারুণ্য'। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু ইমাম, মুক্তিযোদ্ধা-কবি তুষার কর, সুশাসনের জন্য নাগরিগ (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

 

 

সর্বশেষ খবর