বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
বিশিষ্টজনদের আহবান

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখে দাঁড়াও

দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশবরেণ্য সংস্কৃতিসেবী ও বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনা প্রথার মতো দাঁড়িয়ে গেছে। এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন থাকলেও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। এর জন্য সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন দায়ী। এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। আর দেশের চিহ্নিত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর পরে তারা প্রতিরোধ করতে পারল না। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার জন্য শুধু সাম্প্রদায়িক বিষয় নয় এতে তাদের সম্পদ, ব্যবসা লুট করার উদ্দেশ্য থাকে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করতে সচেতন ও বিবেকবান মানুষের এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। কারও ওপর দায় চাপিয়ে সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তবুও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই- আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখতে হবে। এ সন্ত্রাস মোকাবিলায় জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস বর্বর হামলা জন্য প্রধানত জামায়াত-শিবির দায়ী। তবে কিছু এলাকায় উপদলীয় কোন্দল ও লুটপাট করতে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও জড়িত। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনকেও জবাবদিহি করতে হবে। দেশে ১ লাখের বেশি আর্মি, র্যাব, পুলিশ নিয়োজিত থাকার পরেও কেন এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছে তারা ক্ষমতায় না গেলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হবে। এখন তো তারাই ক্ষমতায় গেছে, তাহলে হামলা হচ্ছে কেন? তিনি আরও বলেন, হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদের নিরাপত্তা দিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি আনতে হবে। কোনো টালবাহানা না করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের সংখ্যালঘু বা ভিন্নধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর যে হামলা ও নির্যাতন হচ্ছে, তা এটাই প্রমাণ করে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচালিত হয়নি। তিনি আরও বলেন, এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হলে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী অপশক্তিকে কঠোর হাতে প্রতিহত করুক। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জামায়াত-শিবিরের এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস আমাদের জন্য লজ্জাকর। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমার থু থু দিচ্ছি। এ দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর নির্যাতন প্রতিহত করতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বিশ্বাসী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীরা গণপ্রতিরোধে মাঠে আছে এবং থাকবে। জামায়াত-শিবির দেশকে নষ্ট করতে এ তাণ্ডব করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি তার রাজনীতি থেকে সরে গেছে। সে জামায়াতের রাজনীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াত জোট সব সময় নারকীয় তাণ্ডব করে। পাকিস্তানি স্টাইলের এ রাজনীতির স্থান বাংলাদেশে হতে পারে না। বাংলাদেশে অবস্থানরত এসব পাকিস্তানি দালালদের প্রতিহত করতে হবে। আক্রান্ত নির্যাতিতদের পাশে দেশের জনগণকে দাঁড়াতে হবে। কেননা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বিশ্বের কাছে খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি জামায়াত-শিবিরের মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসী জঙ্গি অপশক্তির বিরুদ্ধে সরকারকে চিরুনি অভিযান পরিচালনার দাবি করেন। যত দ্রুত এই জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী চক্রকে নির্মূল করা যাবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, প্রথমত প্রতিবেশীকে রক্ষার দায়িত্ব প্রতিবেশীর। তাই স্থানীয়দের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করতে হবে। আর যেহেতু এ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিকল্পিত, তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় তড়িৎগতিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব এলাকায় একটি জরুরি টেলিফোন নম্বর রাখতে হবে। এ নম্বরটি সবার মাঝে প্রচার করে ছড়িয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে ওই নম্বরটি যাতে তাৎক্ষণিক ধরা (রিসিভ) হয় সে জন্য কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নাশকতাকারী জামায়াত-শিবিরের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে তাদের অর্থনৈতিক উৎস বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এই সন্ত্রাস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তারা সংখ্যালঘুদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন সরকারের উচিত উগ্র-জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সন্ত্রাস কঠোর হাতে দমন করা। এফবিসিসিআইর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি, সার্ক চেম্বারের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একটি অপশক্তি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। এ অপশক্তি সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিনষ্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করার জঘন্যতম উন্মাদনার ফলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। তিনি আরও বলেন, 'যে যার ধর্ম পালন করবে, থাকবে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ'-এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে সব সামাজিক ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান আবুল কাশেম আহমেদ।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আহ্বান : দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করতে একাত্তরের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। গতকাল সকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে 'বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আলোকে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সুরক্ষায় করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। আলোচনা সভায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক সেনা প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধে এস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ (বীরউত্তম), ৮নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কে এম শফিউল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে দেশ অর্জন করেছি সেখানে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ সবার রক্ত রয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা সেদিন দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু সেদিনের পরাজিত শক্তি আজ দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা চালাচ্ছে। তাদের প্রতিরোধে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। 
সুজনের মানববন্ধন : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলকে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দেশের সব নাগরিককে হামলা বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেকমন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটি সহ-সভাপতি আকবর হোসেন, ঢাকা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত ও মানবাধিকার কর্মী ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতি কর্মীদের মানববন্ধন : এদিকে হামলার প্রতিবাদে লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী-শিক্ষক-ছাত্র-শ্রমজীবী-পেশাজীবী ও রাজনৈতিক কর্মীদের ব্যানারে শাহবাগে আরেকটি মানববন্ধন হয়। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও শাহবাগে সমাবেশ করেছে 'সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধে' প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান বি চৌধুরী : নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিচারবিভাগীয় তদন্ত চান বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ নিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানান। সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে অমানুষিক অত্যাচারিত ও বর্বরতার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি আমি উদ্বেগ, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষ করে তীব্র শীতের সময় তাদের বাড়ি-ঘর, কাপড়-চোপড়সহ আশ্রয়ের সম্বলসমূহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমি মর্মাহত এবং স্তম্ভিত হয়েছি। প্রতিবার নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই লক্ষ্যে আমি বিকল্পধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব অরুণ জেটলি
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর সে দেশের মৌলবাদী সংগঠনগুলোর নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব হলেন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজ্যসভার সদস্য অরুণ জেটলি। গতকাল নিজের ব্লগে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাশ করে তার অভিযোগ, 'নির্বাচনের পরই সে দেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিগত আক্রমণ চলছে। বিষয়টি যথেষ্টই উদ্বেগের।' হিন্দুরা সে দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেও ব্লগে অভিমত প্রকাশ করেন জেটলি। তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর নির্দেশেই অধিকাংশ হামলা সংঘটিত হয়েছে। এটা স্মরণ করা দরকার স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সে দেশে ৩০ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বাস থাকলেও বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১০-১২ শতাংশে। 
দোষীদের শাস্তি চাইল বিএনপিও : দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত 'প্রকৃত' অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গতকাল দুপুরে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। বনানীর ডিওএইচএসে তার নিজ বাসভবনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অন্য কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। তারা দুর্বৃত্ত। আমাদের ঐতিহাসিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যে কালিমা লেপন করতে চায় তারা। সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে অরাজকতা ও উচ্ছৃঙ্খলাতাকে উসকে দিতে চায়। তাদের শনাক্ত করে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান, বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, বিএনপির যে কর্মসূচি চলছে তা গণতান্ত্রিক ও অহিংস। তবে অনেক অপশক্তি পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর