বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন

জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চান তারেক

জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চান তারেক

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় চাকরিচ্যুত র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল মোহাম্মদ তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ ১৫ জনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল সকালে তাদের নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় শুনানি শেষে আদালতকে তারেক সাঈদ বলেন, 'আমি পত্রপত্রিকায় এবং মিডিয়ায় শুনে ও পড়ে সাত খুনে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছি। আমি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত নই। আমি আমার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাই।' এর আগে বিচারক প্রায় ১৫ মিনিট শুনানি শেষে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় তাদের হাজির হওয়ার তারিখ ধার্য করেন। তবে তারেক সাঈদের জবানবন্দি প্রত্যাহারের বিষয়ে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি।

আদালত সূত্র জানায়, ৩০ জুন সাত খুনের ঘটনায় দায়ের দুটি মামলায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিন আদালত ২০ আগস্ট তাদের হাজির হওয়ার দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। শুরুতেই কোর্ট সিএসআই আশরাফ আদালতকে জানান, সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তার আজ হাজির হওয়ার তারিখ ধার্য আছে। এ সময় র‌্যাবের তিন কর্মকর্তার পক্ষে সাইফুল করিম নামে এক আইনজীবী শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চাইলে বাদী পক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানসহ অন্য আইনজীবীরা বাধা দিয়ে বলেন, 'আপনি আইন অনুযায়ী ওকালতনামা জমা দিয়ে কথা বলতে আসেন।' একই সময় আদালতের বিচারকও ওই আইনজীবীকে তার কথা বলার এখতিয়ার নেই বলে অবহিত করেন। শুনানি শেষে আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে আদালতে হাজির হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেন। এর পরই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে র‌্যাবের সাবেক সিও তারেক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, 'আমি পত্রপত্রিকা, মিডিয়ায় শুনে ও পড়ে সাত খুনে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছি। আমি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত নই। আমি আমার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাই।' আদালত তার কথার ওপর কোনো আদেশ দেননি। তারেক সাঈদের সঙ্গে থাকা মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার এম এম রানা এ সময় কোনো মন্তব্য করেননি। তারেক সাঈদের বক্তব্য শুনে আদালতে আইনজীবীরা তাকে চোর, মিথ্যাবাদী ও খুনি আখ্যা দিয়ে ভর্ৎসনা করেন। এদিকে শুনানি শেষে আদালত থেকে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা জুতা ও থুথু নিক্ষেপ করে 'খুনিদের ফাঁসি চাই' বলে স্লোগান দেয়। পরে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ তড়িঘড়ি করে তিনজনকে প্রিজন ভ্যানে তুলে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে।

এদিকে গতকাল সকাল থেকেই র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে হাজির করা হবে খবরে আদালত প্রাঙ্গণ ছিল প্রতিবাদমুখর। সকালে ও দুপুরে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার আগে ও পরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানের নেতৃত্বে শত শত আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে কয়েক দফা মিছিল করেন। শুনানি শেষে সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, তারেক সাঈদ একজন প্রফেশনাল কিলার। আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর তিনি আজ তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি নিজেকে বাঁচাতে বহু চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সাত খুনের ঘটনায় যেসব র‌্যাব সদস্য আদালতে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিচ্ছেন, তাদেরও আসামি করতে আদালতে আবেদন করা হবে। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত ঘোষণা দেন, আইনজীবী চন্দন সরকার হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। সাত খুনে আদালতে হাজির হওয়া অন্য আসামিরা হলেন মোর্তুজা, মহিবুল্লাহ, আলমগীর, সোনা মিয়া, রহিম, জুয়েল, আরিফ, মিজান, তানভীর, ইয়াসিন, রফিকুল ও আলী আহাম্মদ।

প্রসঙ্গত, সাত খুনের ঘটনায় বিভিন্ন দফা রিমান্ডে নেওয়ার পর তিনজনের মধ্যে ৪ জুন আরিফ হোসেন, পরদিন ৫ জুন এম এম রানা ও ১৯ জুন তারেক মোহাম্মদ সাঈদ পর্যায়ক্রমে সাত খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনজনই ২৭ এপ্রিল কীভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে সাতজনকে অপহরণ করে কিলিং মিশনে অংশ নেন তার বিশদ বিবরণ দেন। এর আগে ১৭ মে তারেক সাঈদ ও মেজর আরিফ এবং ১৮ মে এম এম রানাকে ঢাকা সেনানিবাস থেকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবির ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল জানান, সাত খুনের ঘটনায় দায়ের দুটি মামলায় এটি র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তার নিয়মিত হাজিরা। উল্লেখ্য, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে র‌্যাব পরিচয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের হত্যা করে লাশের সঙ্গে ইট ও বস্তা বেঁধে শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ৩০ এপ্রিল একে একে শীতলক্ষ্যা নদীতে ইট ও বস্তাসহ ভেসে ওঠে সাতজনের লাশ। লাশের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া র‌্যাবের রেশনের ডালের বস্তা, র‌্যাবের রশি ও কমান্ড গিঁট নিয়ে টক অব দ্য নারায়ণগঞ্জ হয় যে র‌্যাবই ঘটিয়েছে এ হত্যাকাণ্ড।

 

 

সর্বশেষ খবর