বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

ভয়াল একুশে আগস্ট আজ

আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির নেতাদের হত্যার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। সেই বর্বরোচিত হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন হামলার প্রধান টার্গেট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০০ জন।
তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে সেদিন শান্তি মিছিলের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলের আগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ট্রাকমঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বক্তৃতার শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। তখন বিকাল ৫টা ২২ মিনিট। সমবেত সবাইকে মিছিলে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোচ্ছিলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে তিনি। মুহূর্তেই শুরু আশপাশের ভবনের ওপর থেকে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে শুরু করে একের পর এক  গ্রেনেড। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের  বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তের স্রোত বয়ে যায় এলাকাজুড়ে। স্পি­ন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে রক্তের আলপনা, শত শত মানুষের আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার জন্য, প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের স্থান ছিল না। আল্লাহর মেহেরবাণীতে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও শেখ হাসিনার দুই কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেডের স্পি­ন্টারে গুরুতর আহত হয়ে নারীনেত্রী বেগম আইভি রহমান ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। গ্রেনেডে হত্যা করতে না পেরে শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করে ঘাতকরা ১২ রাউন্ড গুলি করে। টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্র“ফ গাড়ির কাচ। কিন্তু ঘাতকদের বুলেট থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষায় বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। বর্বরোচিত এ ঘটনার খবর রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। গ্রেনেড হামলার উৎসস্থল সন্দেহে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কয়েকটি ভবনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এই রোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও আলামত নষ্টসহ হেন কোনো কাজ নেই যা করে যায়নি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সে সময় ক্ষমতার অঘোষিত কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হাওয়া ভবনে বসে জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়।
বাণী : এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে শান্তিপূর্ণ নিরাপদ স্বদেশ ও সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে একুশে আগস্টের শহীদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বিভিন্ন কর্মসূচি : গত রাত ১২টা ১ মিনিটে গ্রেনেড হামলাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করে আওয়ামী যুবলীগ। কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আজ বিকাল ৫টা ২১ মিনিটে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন। এ ছাড়া একই স্থানে ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর