বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

২০১৯ সালের আগেই সংলাপ নির্বাচন দুটোই হবে : ফখরুল

ঈদের পর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া বিএনপি 'নরম' কর্মসূচি দিয়ে এখন বলছে ২০১৯ সালের অনেক আগেই নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। ক্ষমতাসীনরা সংলাপেও বসবে। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকার যত কথাই বলুক না কেন, তাদের সংলাপে বসতেই হবে। ২০১৯ সালের অনেক আগেই দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। যাতে সব দল অংশ নিতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় সংগঠনের সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদসহ ডিআরইউর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও এ রকম একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি দল ও সরকার পরিচালনার বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মিট দ্য প্রেসে মির্জা ফখরুল চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আন্দোলনের কর্মকৌশল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোটবিহীন নির্বাচন করে সরকার ভাবছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত তারা অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করবে। তারা ভুলের স্বর্গে বাস করছে। জনগণ ওই নির্বাচন মেনে নেয়নি। বিশ্ববাসীও সমর্থন করেনি। আগামী দিনের আন্দোলনের ধরন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন একটি বিজ্ঞান। গাড়ি যেমন প্রথমে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড গিয়ার দিয়ে গতি বাড়াতে হয়, তেমনি আন্দোলনও সেভাবে তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জনগণ যত দ্রুত রাজপথে নেমে আসবে, তত দ্রুত আন্দোলন টপ গিয়ারে উঠবে। ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে বলে বিএনপি বিশ্বাস করে কি-না- জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, কোনো অন্যায় জনগণ মেনে নেয় না, নেবেও না। ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণ অংশ নেয়নি। গণতান্ত্রিক বিশ্বও তা সমর্থন করেনি। সবাই আশা করে, সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের অনেক আগেই সে নির্বাচন হবে।

সরকার পতনে বিএনপির কোনো টাইমফ্রেম আছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সময় নির্ধারণ করে সরকার পতন হয় না। মানুষ যত দ্রুত আবার সংগঠিত হবে, রাস্তায় নেমে আসবে, তত দ্রুত সরকার পতন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তা ছাড়া বিএনপি কোনো ট্রামকার্ডে বিশ্বাস করে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন সংলাপ হবে না। কিন্তু তাদের সংলাপ করতেই হবে। তারা আগেও বলেছেন, সংলাপ করতে হলে জামায়াতকে বাদ দিয়ে আসতে হবে। কিন্তু জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। যখন প্রয়োজন হবে, তখন নিঃসন্দেহে আলোচনা হবে। গণতন্ত্র আজ মহাসংকটে। গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নির্ভর করে গণতন্ত্রের চর্চার ওপর। সাংবাদিকরাই সেই বিবেক যারা গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখতে পারেন। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে সংবাদপত্রবিরোধী কোনো আইন করবে না। অবশ্যই এই সম্প্রচার নীতিমালা পরিবর্তন করব। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমরা কোনো কাজ করব না। দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে দলটি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে প্রচার করে থাকে, সেই দলটির হাতেই আজ গণতন্ত্র নির্যাতিত। যে অবিসংবাদিত নেতা গণতন্ত্রের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিল তার হাতেই গণতন্ত্র প্রথম নিহত হয়েছিল। এখনো দেশে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে একটি মীমাংসিত বিষয়কে আবার অমীমাংসিত অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। এটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। সংবিধান সংশোধনের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার নিজেদের সুবিধার জন্য বারবার সংবিধান পরিবর্তন করছে। বিচার বিভাগকে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয়করণ করেছে। এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্যই সংবিধান পরিবর্তন করছে। যেন কোনো বিচারক তাদের (আওয়ামী লীগের) চিন্তা ও সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে না পারেন। এটা স্পষ্ট যে, এ অনৈতিক সরকার দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন ও সংশ্লিষ্টতায়ই দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। জঙ্গিবাদের হোতাদের সঙ্গে তাদের আত্দীয়তা। বিএনপিই এই জঙ্গিদের দমন করেছে। তাদের বিচার করেছে। 'আরামপ্রিয়তার' কারণেই গত মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনুপস্থিত ছিলেন কি-না- এমন প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকারের পক্ষে যখন কোনো জনসমর্থন থাকে না, তখন অনেক কথা বলতে হয়। এ জন্যই তারা অনেক কথা বলছেন। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, সাময়িক অসুস্থতার কারণেই ম্যাডাম সমাবেশে থাকতে পারেননি। এমনটা তো সবসময় হবে না। সরকারের সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেওয়া হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রস্তাব তো দিয়েই আসছি। তা ছাড়া আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব বড় কথা নয়। বড় কথা হলো দেশের জন্য কোনটি বেশি প্রয়োজন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পাকিস্তানেও এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে। কিন্তু সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে না। হত্যা করছে না। বরং সরকারের পক্ষ থেকে একটি টিম গঠন করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে- এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।

সর্বশেষ খবর