শিরোনাম
বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
সংসদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব সমর্থন

‘কেউ না থাকলেও বাংলাদেশ থাকবে’

ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী, শিশু ও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েল যে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে, এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব এ সংসদ সর্বসম্মতক্রমে সমর্থন করছে। ফিলিস্তিনের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা-ই করব। প্রয়োজনে আহতদের বাংলাদেশে এনে চিকিৎসা করা হবে। অন্য কেউ ফিলিস্তিনের পাশে না থাকলেও বাংলাদেশ থাকবে। তিনি জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা পালনের এবং ইসরায়েলকে যারা সমর্থন করছে তাদের সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ১৪৭ বিধিতে আনা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে জাতীয় সংসদে পাস হয়। এর আগে এ প্রস্তাবের ওপর প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল মতিন খসরু, ডা. দীপু মনি, আ স ম ফিরোজ, জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মহাসচিব জিয়উদ্দিন আহমেদ বাবলু, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সরকারি দলের ড. হাছান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, তাহজীব আহমদ সিদ্দিকী, স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

ফিলিস্তিনিদের জায়গা ইসরায়েলকে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল অনৈতিকভাবে, অন্যায়ভাবে হামলা করছে। নারী-শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি জানি না বিশ্ব বিবেক কী করছে। কেন তারা এর জোরালো প্রতিবাদ করছে না। শিশু ও নারীরা কী অপরাধ করেছেন। কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সাল থেকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল জোর করে বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। গাজা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জায়গা। ওখানে কোনোভাবেই ইসরায়েল বসতি স্থাপন করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এর একটি স্থায়ী সমাধান চান। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে বাংলাদেশ সব ধরনের সহায়তা দেবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইসরায়েলের হামলায় আহত-নিহত শিশু ও নারীদের ছবি তুলে ধরেন সংসদে। ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে তার পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এত নির্মমভাবে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে, সেখানে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। সেখানে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তারা কি এটা দেখতে পাচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। ইসরায়েল যেসব ভূমি দখল করে রেখেছে, তা তাদের ছেড়ে দিতে হবে। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান। এ জন্য মুসলিম উম্মাহকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ চুপ করে আছে। তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কখনোই এ হামলা ইসরায়েল চালাতে পারত না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনা তার প্রস্তাবে বলেন, ‘সম্প্রতি গাজায় নিরীহ মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বাড়িঘর, মসজিদের ওপর ইসরায়েল যে নারকীয় হামলা চালাচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। গাজা এলাকায় দখলকৃত সব জমি ফেরত দেওয়া হোক এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা হোক। ইসরায়েল কর্তৃক এ বর্বরোচিত হামলার জন্য জাতীয় সংসদ তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে। গণহত্যা চালানোর অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানান।
এ প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, যারা কথায় কথায় টেলিফোন করে, বাংলাদেশের সাধারণ একটি নির্বাচন নিয়েও কথা বলে, তারা ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে কথা বলে না। যারা মানবতাবিরোধী কাজ করে ও সমর্থন করে, তাদেরই সমর্থন করে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ’৭১ সালে পাকিস্তানিদের সমর্থন দিয়েছিল। আজ মার্কিনিরা ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আজ মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ইরাক, লেবানন, সিরিয়া আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ডাক, তার ও তথ্য যোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যত দিন বিশ্ব মোড়ল থাকবে তত দিন বিশ্বে শান্তি আসবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আজ বিশ্ব নিশ্চুপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী দেশগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গাজায় যখন হামলা, তখন ইসরায়েলের জনগণ সীমান্তে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল টিম করে মঈনুদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সেখানে যাবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, আমেরিকাও কিছু বলল না। কারণ তাদের প্রশাসনসহ সবকিছু ইহুদিদের প্রভাবে পরিচালিত। তিনি বলেন, আমাদের এখানে নুন থেকে পান খসলেই তারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তারা গাজা নিয়ে চুপ। আজ তাদের মুখোশ উন্মোচিত হলো।
পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ইসরায়েলকে দখলশক্তি হিসেবে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু দখলদার শক্তি হিসেবে স্বীকার করার পরও তাদের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জাতিসংঘের প্রস্তাব মোতাবেক ফিলিস্তিন একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। সে হিসেবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ফিলিস্তিনি জনগণ প্রোটেকটেড পিপল। কিন্তু যখন ফিলিস্তিনের প্রোটেকটেড পিপলদের ইসরায়েল নির্বিচারে হামলা চালিয়ে হত্যা করে, তখন জাতিসংঘ মহাসচিব তা শুনতে পান না। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।

সর্বশেষ খবর