বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল হতে পারে না

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল হতে পারে না

বএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ধর্মকে ভিত্তি করে কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। রাজনীতিতে ধর্মের অবদান থাকতে পারে। কিন্তু এর ওপর ভিত্তি করে দল হতে পারে না। তিনি তার পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বক্তব্যের প্রতি কর্মীদের খেয়াল রাখতে বলেন। তারেক রহমান বলেন, ’৮০ সালের সেপ্টেম্বরে এক কর্মশালায় জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। ধর্মকে ভিত্তি করে কখনোই রাজনীতি করা যায় না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে জামায়াতসহ একাধিক ধর্মভিত্তিক দল থাকা সত্ত্বেও তারেক এ কথা বলেন। সোমবার রাতে লন্ডনে বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। পূর্ব লন্ডনের অট্রিয়াম ব্যাংকুয়েটিং হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়ছর আহমদ। অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরে মাহদী আমিন নির্মিত ‘লং ওয়াক টু ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণের কাছে জিয়াউর রহমানের গ্রহণযোগ্যতা ও বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত কিংবা তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারাই জিয়াউর রহমানকে অপপ্রচারের টার্গেট করেছেন। ইতিহাস বিকৃতি করছেন। তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। আর জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ’৭৭ সালের ২১ এপ্রিল। এই সময়ের মধ্যে দুজন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন হলেন মোশতাক আহমদ। অন্যজন বিচারপতি সায়েম। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিতে চাইলে এত দিন অপেক্ষা করার দরকার ছিল না। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে গৌরবজনক ও সাহসী ভূমিকার কারণে তিনি ছিলেন দেশে সব সময় জনপ্রিয়। তারেক রহমান বলেন, যারা এখন বিএনপি কিংবা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনেকেরই গৌরবজনক অংশগ্রহণ ছিল না। এদের অনেকেই ’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের কাছে স্বেচ্ছাসমর্পণের আগে শেখ মুজিবের দেওয়া তেল নাকে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ তেলবাজেরাই এখন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে তেল ব্যবহার করছেন। নিজেরাই নিজেদের মতো করে তেলাক্ত ইতিহাস রচনা করছেন। তাদের গলাবাজিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অসহায়। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠা, দর্শন, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা এবং শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর কিছু বিষয় তথ্য-প্রমাণসহ তুলে ধরেন।
সভায় আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক, সাবেক সেক্রেটারি ব্যারিস্টার এম এ সালাম, আবদুল হামিদ চৌধুরীসহ অনেকে। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় হামলা প্রসঙ্গে তারেক রহমান আবারও এ ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়ে বলেন, তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের কাছে না জানিয়ে কেন হঠাৎ করে সমাবেশের ভেন্যু পরিবর্তন করা হলো তা তদন্ত করে বের করতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় পুলিশ কর্মকর্তা যিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমপি মনোনয়ন চেয়েছিলেন, চাকরিতে পুনর্বহাল করে তাকে দিয়ে মামলার তদন্ত নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। তারেক রহমান বলেন, তিনি কোনো নতুন ইতিহাস বিনির্মাণ করছেন না। ইতিহাস লিখবেন ইতিহাসবিদেরা। লেখক কিংবা ওই সময়ের ঘটনাবলির যারা সাক্ষী তারা লিখবেন, তারা প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হুমায়ূন আহমেদ সত্য ইতিহাস লিখতে গিয়েও তার বইয়ের বিষয়াবলি আদালতের মাধ্যমে সেন্সর করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এমপি মরহুম এ বি এম মূসাকে অপ্রিয় সত্য বলার কারণে শেষ বয়সে অপমানিত হতে হয়। তারেক রহমান বলেন, এটি অসভ্যতা। এ অসভ্যতা মেনে নেওয়া যায় না। এ কারণেই তিনি ইতিহাসের কিছু কঠিন সত্য, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, ইতিহাসের কঠিন সত্য তুলে ধরার কারণে কিছু লোক উল্টাপাল্টা বলছেন। তারেক রহমান হজরত আলী (রা.)-এর একটি বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যুক্তিবুদ্ধিহীন মানুষই অশ্লীল কথা বলে। তারেক রহমান আবারও ’৭৫-এর আগস্ট হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্য হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন।
- আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

সর্বশেষ খবর