শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
বসুন্ধরা সিমেন্ট ওয়ানডে সিরিজ

বাংলাদেশ ৪ জিম্বাবুয়ে ০

বাংলাদেশ ৪ জিম্বাবুয়ে ০

বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলেছেন মুশফিক ও রিয়াদ -রোহেত রাজীব

মধ্যদুপুরে দেখা মিলল সূর্যের। তাও আবার কুয়াশাঢাকা। বিকাল হতেই তা আবার হারিয়ে গেল। সূর্যের আলো আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে ভারী কুয়াশায়। সন্ধ্যা হতেই কুয়াশা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে ঝরতে থাকে মিরপুরে। কুয়াশাচ্ছন্ন এমন শীতল পরিবেশে মেক্সিকান ওয়েভ তুলে গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন হাজার পঁচিশেক ক্রিকেটপ্রেমী। তাদের আনন্দ, উচ্ছ্বাস কোনোভাবেই উদ্দীপ্ত করতে পারেনি জিম্বাবুয়েকে। বরং আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে মাশরাফিদের। আত্মবিশ্বাসী মাশরাফিরা কালও দাঁড়াতে দেননি এল্টন চিগুম্বুরাদের। পাঁচ ম্যাচ বসুন্ধরা ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থটি ২১ রানে জিতে ব্যবধান করে নিয়েছে ৪-০। এখন সোমবার জিতলেই দ্বিতীয়বারের মতো জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ। দুই দলের লড়াইয়ে ২০০৬ সালে আফ্রিকার প্রতিনিধিদের প্রথম ও শেষবার পাঁচ ম্যাচ সিরিজে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করেছিল টাইগাররা।
মঙ্গলবার শন অ্যাবোটের বাউন্সারে সেন্স হারান ফিল হিউজ। এরপর টানা দুই দিন লড়াই করেছেন মৃত্যুর সঙ্গে। বৃহস্পতিবার ক্রিকেটবিশ্বকে কাঁদিয়ে স্থায়ী আবাস গেড়েছেন না-ফেরার দেশে। অজানা-অচেনা দেশে থিতু অসি ক্রিকেটারকে শ্রদ্ধা জানাতে ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দেশের ক্রিকেটাররা। এরপর কালো ব্যাজ পরে নামেন মাঠে। ম্যাচ শেষে শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সাজঘরের সামনে লাইন দিয়ে ব্যাট সাজিয়ে রাখেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, যেখানেই ক্রিকেট হয়েছে কাল, সেখানেই শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন ক্রিকেটাররা।
ভারী কুয়াশায় আচ্ছন্ন মিরপুরে বল মুভ করবে, অতিরিক্ত বাউন্স থাকবে জেনেই টস জিতে ব্যাটিং নেন মাশরাফি। উদ্দেশ্য, রাতের শিশির এড়ানো। কাজটি করতে নেমে শুরুতে হোঁচট খায় টাইগাররা। মাদজিভা ও সলোমন মায়ারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ৩২ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ। প্রথম ৭৪ বলে চার ব্যাটসম্যান হারিয়ে দল যখন এবড়ো-খেবড়ো পথে হাঁটতে শুরু করে, তখনই হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। দলের ক্রান্তিকালে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৩৪ রান যোগ করেন একসময়কার ওয়ানডে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। দুজনের গড়া ভিতে দাঁড়িয়ে শেষ বেলায় ঝড়ো ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়কের ২৫ বলে ৩৯ এবং মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫৬ রান করে টাইগাররা। সিরিজে যা টানা চতুর্থ আড়াই শ-ঊর্ধ্ব ইনিংস মাশরাফিদের। টাইগারদের প্রথম তিন ম্যাচের স্কোর ২৫১/৭, ২৮১/৭ ও ২৯৭/৬। ৩২ রানে চার ব্যাটসম্যান হারানোকে সামাল দেন দুই অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিক ২৫.১ ওভারে ১৩৪ রান যোগ করে। পঞ্চম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ স্কোর ১৪৮, সাকিব-মুশফিকের। মুশফিক ব্যক্তিগত ৭২ রানে সাজঘরে ফেরার আগে নামের পাশে লিখে নেন ১৮ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। টেস্ট অধিনায়ক ফিরলেও মাশরাফিকে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ যোগ করেন ৮ ওভারে ৬৫ রান। মাহমুদুল্লাহ ৮২ রানের ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। কালই প্রথম জ্বলে ওঠেন জিম্বাবুইয়ান পেসাররা। তিনটি করে উইকেট নেন মাদজাভি ও মায়ার। ২৫৭ রানের টার্গেটে ৬০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েন আফ্রিকার প্রতিনিধিরা। সেখান থেকে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৬ রান যোগ করে দলকে ম্যাচে ফেরান টেস্ট অধিনায়ক ব্লেন টেলর ও মায়ার। দুজনই খেলেন হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস। রুবেল হোসেনের বলে সাজঘরে ফেরার আগে টেলর করেন ৬৩ রান। ১৬০ ম্যাচে ৩১ নম্বর হাফ সেঞ্চুরিটি হতো না যদি শূন্য রানে সিলিতে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েশ ক্যাচটি নিতেন টেলরের। অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া লিগ খেলা মায়ার বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও চৌকসতা দেখান। খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। দুজনের পতনের পর আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ে আফ্রিকার প্রতিনিধিরা। শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে জিম্বাবুয়ে নামের পাশে লিখে নেয় ৮ উইকেটে ২৩৫। ১১৪ নম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত জুবায়ের হোসেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে নাম লেখান রেকর্ড বুকে। দুই স্পেলে ৬ ওভারে উইকেট নেন দুটি। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ সাকিব বল হাতে নেন ২ উইকেট।

সর্বশেষ খবর