শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
অস্ত্রসহ একজন গ্রেফতার

এমপি-মেয়রের ক্যাডাররাও পালিয়েছে টাঙ্গাইল থেকে

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরাও চম্পট দিয়েছেন। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। গতকাল রাতে রানা ও মুক্তির একান্ত বিশ্বস্ত এক ক্যাডার বিদেশি রিভলবারসহ গ্রেফতার হয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) গোলাম মাহফিজুল ইসলাম জানান, জেলা শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকা থেকে স্বপন মিয়া নামে এক সন্ত্রাসীকে একটি বিদেশি রিভলবার ও এক রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। স্বপন মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই রিভলবার তাকে এমপি রানার ভাই জাহিদুর রহমান খান কাঁকন দিয়েছেন। কাঁকনের নির্দেশে স্বপন বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন বলে পুলিশকে বলেছেন। টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। স্বপন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। এদিকে এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইয়েরা টাঙ্গাইল ছেড়ে পালানোর খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে শহরে গুঞ্জন ছিল যে এমপি রানা ও মেয়র মুক্তিসহ তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা যে সত্যি সত্যি টাঙ্গাইল ছেড়ে গেছেন তা আমরা আজ (শুক্রবার) বাংলাদেশ প্রতিদিনের সংবাদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি।’ টাঙ্গাইল জেলা কৃষক লীগের এক নেতা বলেন, ‘রানার চার ভাইয়ের অত্যাচারে টাঙ্গাইলবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর টাঙ্গাইল জেলায় যে নেতা সর্বপ্রথম আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি ফারুক আহমেদ। রানা ও তার ভাইয়েরা সেই ফারুক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করেছেন। দীর্ঘদিনেও এই হত্যার বিচারটুকুও আমরা পাইনি।’ টাঙ্গাইল জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা শহরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এত দিন যেসব নেতা-কর্মী খান পরিবার সম্পর্কে আড়ালে পর্যন্ত কথা বলতে ভয় পেতেন তারা এখন প্রকাশ্যে সমালোচনা শুরু করেছেন। তাদের অনেকেই এখন নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে বসছেন। কার্যালয়ের আশপাশেও নিয়মিত আড্ডা দিচ্ছেন তাদের সমর্থকরা। ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, এমপি রানার পরিবারের সদস্যরা থাকেন টাঙ্গাইল জেলা শহরে, কিন্তু এমপি হন এই এলাকা থেকে। এমপি হওয়ার আগে ও পরে কখনই আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের সঙ্গে রানার সম্পর্ক ভালো ছিল না। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জানান, এমপি রানা ও তার ভাইদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ফারুক হত্যা মামলায় জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এতে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নন, টাঙ্গাইলের প্রতিটি মানুষ খুশি। তিনি খান পরিবারের চার ভাইয়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। খুনি যেই হোক, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ফারুক হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আমানুর রহমান রানা ও তার ভাইদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেওয়াকে মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট শরীফ হাজারী বলেন, ওরা পালানোয় দলীয় নেতাসহ টাঙ্গাইলের সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। আল্লাহ এত দিনে অত্যাচারিত মানুষের কথা শুনেছেন। উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়ার বাসার সামনে থেকে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গত আগস্টে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামক দুজনকে গ্রেফতার করে। তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে জানা যায়, এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি এবং ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা চার ভাই এখন টাঙ্গাইলের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের গ্রেফতারে প্রস্তুত হয়ে আছে পুলিশের একাধিক দল। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, আমানুর রহমান খান রানা এমপি ও মেয়র মুক্তিকে গ্রেফতার করতে টাঙ্গাইল পুলিশের একাধিক দল ঢাকায় রয়েছে। তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের সহায়তায় তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। বুধবার রানার ন্যাম ফ্ল্যাটের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু ফ্ল্যাট থেকে সারা দিন কেউ বের হয়নি বলে অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আমানুর রহমান খান রানা ও সহিদুর রহমান খান মুক্তি এত দিন শহরে দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘোরাফেরা করলেও গত দু-তিন দিন তাদের আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। চার ভাই শহর ছেড়ে পালিয়েছেন- এ তথ্য টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর