শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ভারতে বাংলাদেশি গোয়েন্দারা

সাজিদকে দফায় দফায় জেরা

বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মূল হোতা জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) জঙ্গি সাজিদ ওরফে শেখ রহমতুল্লাহকে দফায় দফায় জেরা করেছে সাত সদস্যের বাংলাদেশ গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। বিস্ফোরণ ঘটনা তদন্তে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা কলকাতায় পৌঁছেন। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের ভিতরই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-এর আইজি (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব সিংসহ চার কর্মকর্তার সঙ্গে এক বৈঠক হয় ঢাকার গোয়েন্দা দলটির। রাতেই সল্টলেকের সিআরপিএফ-ক্যাম্পে এনআইএ-এর অস্থায়ী কার্যালয়ে যায় গোয়েন্দা দলটি। সেখানে এনআইএ-এর হেফাজতে থাকা সাজিদকে রাত ১২টা পর্যন্ত জেরা করেন গোয়েন্দারা। এরপর রাতে হোটেলে ফিরে গতকাল সকাল ১০টায় ফের এনআইএ ক্যাম্পে আসেন তারা। সেখানে এনআইএ কর্তাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন। এরপর দফায় দফায় সাজিদকে জেরা করে ঢাকার প্রতিনিধি দলটি। ২ অক্টোবর বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় শাকিল আহমেদ ও আবদুল করিম (সোবহান মণ্ডল) নামে দুই জেএমবি সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। তদন্তে নেমে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এক বিরাট আন্তর্জাতিক জঙ্গি চক্রের সন্ধান পায়। ওই বিস্ফোরণ কাণ্ডে গ্রেফতার জঙ্গিদের জেরা করে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হওয়া ১২০টি ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) চোরাপথে চার দফায় বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে। সে দেশে নাশকতা তৈরির জন্যই যে তা পাঠানো হয়েছিল তা একপ্রকার নিশ্চিত। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বসেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলেও গোয়েন্দারা জানতে পারেন। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বর্ধমান জেলাকে নিয়ে যে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ গঠনের পরিকল্পনা ছিল সাজিদকে জেরা করে গতকাল সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন গোয়েন্দারা। জানা গেছে, সাজিদ সম্পর্কে র‌্যাবের তরফে এনআইএ-এর হাতে বেশকিছু তথ্য তুলে দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে একটি ডাকাতি মামলায় অভিযুক্ত এই সাজিদ। ২০১২ সালে অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। সে সময় সাজিদের আঙুলের ছাপ ও চোখের রেটিনা স্ক্যান করা হয়। এগুলোই এনআইএ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সাজিদের স্ত্রী ফাতেমাকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। জেরায় ফাতেমা জানান, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ২৫ জন মহিলাকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ফাতেমাকে জেরা করে যে তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ গোয়েন্দাদের হাতে, এদিন এনআইএ-এর সঙ্গে সেই তথ্যও আদান-প্রদান করা হয়। সাজিদের পাশাপাশি হায়দরাবাদে ধৃত জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবানের সদস্য মিয়ানমারের বাসিন্দা খালেদ মুহাম্মদ, আমজাদ আলী শেখ, জিয়াউল হক, রাজিয়া বিবি, আমিনা বিবি, হাসান সাহেবের সঙ্গেও কথা বলে বিভিন্ন না-জানা তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করেন গোয়েন্দারা। সাজিদকে জেরা করার পরই গতকাল দুপুরে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে তোলা হয়। সাজিদের সঙ্গে আদালতে তোলা হয় খালেদ মুহাম্মদ ও আবদুল হাকিমকেও। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন অভিযুক্তকেই এনআইএ-এর হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ এনআইএ ক্যাম্প ত্যাগ করে ঢাকার গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলটি। এরপর বিকালে চলে যায় কলকাতার বাবুঘাটে গঙ্গাপাড়ে। সেখানে লঞ্চে করে জলপথ পরিদর্শন করেন গোয়েন্দারা। এদিকে ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) প্রধান জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরী কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, বর্ধমান ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল না। তার মতে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের কর্মীর অপ্রতুলতা রয়েছে, পরিকাঠামার অভাব রয়েছে। এটা দূর করতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে আছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (এনএসআই) প্রধান কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গোয়েন্দাপ্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশের (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অতিরিক্ত ডিআইজি জি এম আজিজুর রহমান, সিআইডির স্পেশাল পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইর মেজর মুহম্মদ আতিকুর রহমান ও পুলিশের এআইজি মাহফুজুর রহমান। প্রতিনিধি দলটি বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণস্থলও পরিদর্শন করতে পারে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর