বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

রেল যাচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে

পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথ বিস্তৃত হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এ লক্ষ্যে চলছে নানামুখী কর্মযজ্ঞ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্পের নকশায় রেল লিংক থাকলেও এটি নির্মাণে যে অনিশ্চয়তা বা সংশয় দেখা দিয়েছিল, তা কেটে গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন ব্যাংকের (জাইকা) অর্থায়নে রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে দাতা সংস্থাটি কত টাকা দেবে, এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এ ছাড়া সমন্বয়ের মাধ্যমে রেল লিংকের কাজ করতে এবং এ সংক্রান্ত বৈঠক ডাকতে গত ২০ নভেম্বর সেতু বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি মাসে রেল ভবন পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী রেল সেতু নির্মাণে জরুরি নির্দেশনা দেন এবং প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন। তাই দ্রুত ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা হচ্ছে। রেলের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী মাসে প্রথম পর্যায়ের সমীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই প্রকল্পের অর্থায়ন চূড়ান্ত হওয়া জরুরি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থায়নের জন্য জাইকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিভিন্ন সংস্থার প্রস্তাব থাকলেও এ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি। তবে জাইকার অর্থায়ন নিয়েই চলছে মূল আলোচনা। তা চূড়ান্তকরণ শেষে প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে দরপত্র চূড়ান্ত হওয়া এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রিসেটেলমেন্ট কার্যাদি সম্পাদনের জন্য প্রায় এক বছর সময় লাগবে। এরপর ভাঙ্গা-মাওয়া রেল সংযোগ নির্মাণে তিন বছর এবং মাওয়া-ঢাকা রেল সংযোগ নির্মাণে পাঁচ বছর লাগবে। পরবর্তী এক বছর থাকছে ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড হিসেবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মাওয়া হয়ে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তাই সেতু চালুর দিন থেকেই রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে নির্মাণ করতে হবে পদ্মা সেতু থেকে জাজিরা হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল লাইন। বর্তমানে চলছে এর সমীক্ষা প্রণয়নের কাজ।
এদিকে রেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার সঙ্গে রেল সংযোগে দরকার ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতুতে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং সেতুর পর জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। রুটটি ভাঙ্গা হয়ে ফরিদপুর-পাচুরিয়া দিয়ে বিদ্যমান রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। ইতিমধ্যে সরকারি অর্থায়নে পাচুরিয়া-ফরিদপুর পর্যন্ত রেলপথ সংস্কার করা হয়েছে এবং ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কিন্তু ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে নির্মাণ করতে হবে মোট ৮২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার রেল লাইন। কারণ বর্তমানে ঢাকার গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত রেললাইন আছে। গেণ্ডারিয়ার বিদ্যমান লাইন হয়ে কেরানীগঞ্জ-নিমতলা-শ্রীনগর-মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং পদ্মা সেতু হয়ে জাজিরা-মাদারীপুরের শিবচর-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার (সর্বমোট ৮২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার) অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে এই অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়। জানা গেছে, পরামর্শক চুক্তিপত্রের আওতায় পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু-জাজিরা-ভাঙ্গা রুটে রেল লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত ডিজাইন ও টেন্ডারিং সেবা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর রেল লাইন নির্মাণের শুধু সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হবে, যা শেষ হবে এ বছরই। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুসহ দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে রেল লাইন নির্মাণের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু-জাজিরা-ভাঙ্গা সেকশনে নতুন সাতটি স্টেশন হবে। এগুলো হলো কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর ও ভাঙ্গা। এ সেকশনে ৮৩টি সেতু (বড় ২৭টি, ছোট ৫৬টি) নির্মাণ করতে হবে। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে নৌ-চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ক্লিয়ারেন্স রক্ষায় গেণ্ডারিয়ার পর প্রায় ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড রেলপথ থাকবে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর দুপাশে নির্মাণ করা হবে ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (অবতল বা উপত্যকার উপর নির্মিত সেতুপথ)। নতুন করে নির্মীয়মাণ এসব রেলপথ ও সড়কপথ পৃথক উচ্চতায় করতে ৪০টি আন্ডারপাস ও তিনটি ওভারপাস নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিদ্যমান ঢাকা-গেণ্ডারিয়া অংশে পাঁচটি লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণ করা হবে।  
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু-জাজিরা-ভাঙ্গা রেলপথ নির্মাণে প্রায় ৩৬৫ হেক্টর জমি প্রয়োজন, এর মধ্যে ৯২ হেক্টর জমি দেবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। অবশিষ্ট জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদিত অ্যালাইনমেন্টে বিস্তারিত ডিজাইনের লক্ষ্যে জিও-টেকনিক্যাল সার্ভেসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ চলছে। এ ছাড়া সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ট্রাফিক ফোরকাস্ট নির্ধারণের কাজ চলছে। চলতি ডিসেম্বরে খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন এবং এপ্রিল নাগাদ খসড়া ডিটেইল্ড ডিজাইন প্রতিবেদন জমা দেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা-যশোর রেল লাইন নির্মাণের জন্য অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্তকরণেও বিভিন্ন স্টাডি চলছে। প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের অ্যালাইনমেন্ট এবং প্রস্তাবিত আটটি স্টেশনের লোকেশন চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। সমীক্ষার কাজ আগামী জুনে শেষ হবে।

সর্বশেষ খবর