শনিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজধানীর পয়েন্টে পয়েন্টে নিয়ন্ত্রণ নেবে আওয়ামী লীগ

রাজধানীর পয়েন্টে পয়েন্টে নিয়ন্ত্রণ নেবে আওয়ামী লীগ

আর মাত্র একদিন পরেই আলোচিত-সমালোচিত সেই ৫ জানুয়ারি। দিনটিকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই কেবল নয়, আওয়ামী লীগ সারা দেশ এদিন নিজেদের দখলে রাখতে নিচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। রাজধানীর থানায় থানায় এমনকি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা থেকে বের হবে বিজয় র‌্যালি। সারা দেশে থাকবে একই কর্মসূচি।
দলীয় সূত্রমতে, দেশের সবকটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ এবং আনন্দ মিছিলের আয়োজন চলছে। এদিকে ১০ জানুয়ারি শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগে এখন সাজ সাজ রব। দলের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়- সর্বত্রই দলীয় নেতা-কর্মীদের ঢল। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সহযোগী সংগঠনগুলোতেও চলছে সমাবেশ সফলের প্রস্তুতি। দফায় দফায় বসছে দলীয় নেতাদের বৈঠক। কেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। ৫ জানুয়ারি ব্যাপক শোডাউন করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনাসহ পাঠানো হয়েছে জেলা-উপজেলায় চিঠি। তৃণমূল নেতাদের ওয়ার্ম আপ করতে কেন্দ্র থেকে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের সমাবেশ সফল করতে গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সভাপতিত্বে বৈঠকে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, ড. আবদুর রাজ্জাক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুল মান্নান খান, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ফরিদুন নাহার লাইলী, সুজিত নন্দী রায়, এনামুল হক শামীম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, হাবিবুর রহমান এমপি, ইলিয়াস মোল্লা এমপি, সানজিদা খানম এমপি ও মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ ঢাকার বিভিন্ন থানার সভাপতি-সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ৫ জানুয়ারির সমাবেশ সফল করতে বিস্তারিত কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়। গৃহীত কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ বিজয় র‌্যালি, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করবে। বৈঠক শেষে মাহবুব-উল আলম হানিফ কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ৫ জানুয়ারি রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে, পাড়া-মহল্লায় আমরা আনন্দ মিছিল করব। এ ছাড়া ঢাকার ১৬টি পয়েন্টে সমাবেশ হবে। ওইসব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা বড় বড় কথা বলছেন, তারা কাগুজে বাঘ। ওইদিন (৫ জানুয়ারি) তাদেরই খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাঠ আওয়ামী লীগের দখলেই থাকবে। দলীয় সূত্রমতে, বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে সোমবার সারা দেশে নিজের সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলে কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্র থেকে কড়া দিকনির্দেশনা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সবকটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সমন্বয়ের। দলের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতারা কর্মসূচি সফল করার বিষয় নিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন। সূত্রমতে, শেখ হাসিনা নিজেই টেলিফোনে বিভাগীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন।  আগামী সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ সমবেত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এদিন রাজধানীর ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেবেন দলের নেতা-কর্মীরা। দুপুরে তারা একযোগে আনন্দ মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবেন। রাজধানীর ১৬টি পয়েন্টে নেতৃত্ব দেবেন রাজধানীর বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত দলীয় এমপি ও স্থানীয় নেতারা। এসব পয়েন্টে সকাল থেকেই আনন্দ সমাবেশের নেতৃত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এমপিরা। কোনো এলাকায় বিএনপি মিছিলের নামে নৈরাজ্য কিংবা সন্ত্রাস করলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ ও পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল করবে আওয়ামী লীগ। সূত্রমতে, ঢাকার বাইরে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। বিএনপি বাইরে থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে চাইলেও বাধা দেবে আওয়ামী লীগ। সূত্রমতে, দলীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রশাসনিক সব ধরনেরও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওইদিন রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা থাকবে আওয়ামী লীগের দখলে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র রক্ষা হয়। সেদিন যাতে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি রাজপথে নামতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৫ জানুয়ারি ঢাকা থাকবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দখলে। ওইদিন স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজপথে নেমে কোনো ধরনের সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর