রবিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

যৌথবাহিনীর অভিযান যে কোনো মুহূর্তে

গ্রেফতারের তালিকায় রয়েছেন ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা

যৌথবাহিনীর অভিযান যে কোনো মুহূর্তে

নাশকতার লাগাম টেনে ধরতে সারা দেশে শুরু হচ্ছে বিশেষ অভিযান। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সমন্বয়ে এ অভিযান শুরু হবে চলতি সপ্তাহের যে কোনো মুহূর্তে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযানের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষও করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আর এ অভিযানের তদারকি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিযানে চলমান রাজনৈতিক নাশকতায় জড়িত এবং এর মদদদাতাদের যে কোনো মূল্যে আটক করা হবে। অন্যান্য অভিযান থেকে ভিন্ন ও কঠোর এ অভিযানে গ্রেফতারের তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও রয়েছেন। তালিকায় আরও রয়েছে পেশাদার অপরাধীদের নাম।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল টেলিফোনে বলেন, অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত সাধারণ মানুষের ওপর বোমা মারছে, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করছে। এদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা মামলার আসামি তাদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাবে এটাই স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে সাতক্ষীরাসহ সন্ত্রাসকবলিত বেশ কয়েকটি জেলায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব মোকাবিলায় সরকার যৌথবাহিনীর অভিযান চালায়। পরে ওইসব জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ওই সাফল্য কাজে লাগাতেই ফের যৌথ অভিযানের এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সাতক্ষীরাসহ সন্ত্রাসকবলিত জামায়াত-শিবিরের আখড়া ২১ জেলায় এবারও বিশেষ নজরদারি রয়েছে। ইতিমধ্যে এই জেলাগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। সারা দেশে একযোগে অভিযান শুরুর সময় এ জেলাগুলোয়ও অভিযানের মাত্রা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে নাশকতাকারী, ইন্ধনদাতা এবং তাদের অর্থের জোগানদাতাদের একটি বড় তালিকা এসেছে। ওই তালিকা ধরেই অভিযান পরিচালিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তালিকায় বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রশিবির, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং শ্রমিক দলের জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নাম রয়েছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে পুরানো নাশকতার একাধিক মামলা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে অভিযানটি যে কঠোর হবে তা বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে পুলিশের অভিযানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, শমসের মবিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমসহ বিএনপি-জামায়াতের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী নাশকতার অভিযোগে ৫ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ দিনে সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন ৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি। তাদের একটি বড় অংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। এতে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। দুর্বৃত্তদের অব্যাহত আগুন-বোমাসহ হামলায় পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটসহ কয়েক শ নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন অনেকেই। টানা অবরোধ-হরতালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক। যে কারণে এই জেলাগুলোয় চলমান নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের নাগাল টানতে ইতিমধ্যে বিজিবি মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূল অভিযানের আগেই এই ২১ জেলায় যৌথ অভিযানও শুরু করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারের তালিকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও প্রথম সারির নেতারাও রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজধানীসহ স্পর্শকাতর জেলাগুলোয় বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও এসব জেলায় সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ রাখতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান ছাড়াও বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের চলমান আন্দোলন রুখতে ঢাকাসহ স্পর্শকাতর ২২ জেলায় ৪৯ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতানে করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপি চেয়েছে ১০ প্লাটুন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ আনসার বাহিনীর সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ স্পর্শকাতর জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর