শনিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম

ঢাকায়ও নামানো হয়েছে বিজিবি - বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিরিজ নাশকতায় মানুষের নিরাপত্তা চাহিদা বাড়ছে। আর এই নিরাপত্তায় নিয়োজিত যাদের থাকার কথা, সেই পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখন ক্লান্তির ছাপ। এ অবস্থায় সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটলে তা সামাল দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। রাজধানীসহ সারা দেশেই এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপত্তা চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি টানা অবরোধ ও হরতালে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। সতর্ক থাকতে হচ্ছে দিনের ২৪ ঘণ্টাই। গতকাল পর্যন্ত টানা ১৮ দিন ধরে এমন বিরামহীন ডিউটিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রীতিমতো পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় কম ঝুঁকিপূর্ণ জেলার পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তবে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতেও রাজনৈতিক সহিংসতায় পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। এবারও দায়িত্ব পালন করছেন অতীতের মতোই। পুলিশ সদস্যদের সে রকম পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও রয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজি এস এম শাহজাহান বলেন, পুলিশের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ রয়েছে টানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালন করার। তবে যেন নাশকতার ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আগে থেকেই পুলিশকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো দরকার। নাশকতার ঘটনা কম ঘটলে পুলিশের ক্লান্তি আসার কথা নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিনিরাপত্তার চাহিদাপত্রের স্তূপ এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের বিভিন্ন দফতরে। নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনকারীর মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, রাজনীতিক ও বিদেশি কূটনীতিক। চাহিদাপত্র অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, টানা ডিউটিতে ক্লান্তি ও চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে। থানার ওসি, এসআই ও কনস্টেবলদের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি করতে হচ্ছে। ব্যারাকের রিজার্ভ পুলিশ সদস্যরাও ডিউটি করছেন ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা। এ জন্য তারা বাড়তি কোনো সুবিধাও পাচ্ছেন না। তার ওপর ডিউটির সময় রয়েছে খাবারের সমস্যা, পিকেটারদের ককটেল ও চোরাগোপ্তা হামলার ভয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ২৫ হাজারের বেশি সদস্য বিরামহীন দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সবধরনের ছুটি বাতিল এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ জেলার পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর বেশ কয়েক থানার ওসি ও ইন্সপেক্টরের (তদন্ত) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ জানুয়ারির পর থেকে ২৪ ঘণ্টাই তাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সময়টুকুও পাচ্ছেন না তারা। থানার এসআই, এএসআই, হাবিলদার, কনস্টেবলসহ সবাইকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দিগুণ-তিনগুণ ডিউটি করতে হচ্ছে। ডিএমপির একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, থানার ওসিদের ডিউটির নির্ধারিত কোনো সময় নেই। থানা এলাকায় কোনো দুর্ঘটনা কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর পেলেই ওসিদের ছুটে যেতে হয়। তাই ২৪ ঘণ্টাই তাদের ডিউটি। অন্য সময় বিশ্রামের কিছুটা সময় পাওয়া যেত। কিন্তু এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্রামের সময়ও পাওয়া যায় না। তা ছাড়া থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল গাড়ি নেই। রিকুইজিশন করা খোলা ট্রাক নিয়ে ডিউটি করতে হয়। গতকাল তেজগাঁও এলাকায় ডিউটি করছিলেন কনস্টেবল হারুন (ছদ্মনাম)। দিনে কত ঘণ্টা ডিউটি করতে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টায় ডিউটি শুরু। ব্যারাকে ফিরি রাত ১০টায়। রাতে ডিউটি থাকলে বিকাল ৫টায় ডিউটিতে আসি, ব্যারাকে ফিরতে ফিরতে সকাল ৯টা-১০টা। এভাবেই চলছে আল্লাহর ৩০ দিন।’  মিরপুরের কনস্টেবল মইনুদ্দিন বলেন, ‘মাঠেই খাওয়া, মাঠেই থাকা। পিকেটারদের হামলা ও ককটেলের ভয় তো আছেই। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। বাড়িতে মা অসুস্থ। কিন্তু যাওয়ার সময় হয়নি। ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’ মতিঝিল থানার একজন এসআই বলেন, ‘দিন-রাত রাস্তায় কাটছে। উপর মহলের যেভাবে নির্দেশ, সেভাবে কাজ করি। খাওয়া-ঘুম কিছুই ঠিক নাই। যা খাই, তাকে আর খাবার বলা যায় না।’ নিরাপত্তা চাহিদা বাড়ছে : চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে; বাড়ছে নিরাপত্তার চাহিদাও। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিনিরাপত্তার চাহিদাও প্রতিদিন জমা পড়ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের বিভিন্ন দফতরে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, রাজনীতিকসহ বিদেশি কূটনীতিকরা। পুলিশের সহায়তায় দেশের ৩৫ জেলা  থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ইতিমধ্যে বিজিবি  মোতায়েনের চাহিদা এসেছে। ওইসব জেলায় ক্ষণে ক্ষণে বিজিবি টহল দিচ্ছে। সূত্র জানায়, রেলপথ ও রেলস্টেশনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। সুপ্রিমকোর্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েও চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম  থেকে দেশের বিভিন্ন ডিপোতে নৌপথে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কোস্টগার্ড মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়  দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৪৪৮টি পুরাকীর্তি ও ১৭টি জাদুঘরের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন করতে অনুরোধ করে চাহিদাপত্র দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন রুটে সড়ক  যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা  থেকে বিজিবি, ব্যাটালিয়ন আনসার ও পুলিশ মোতায়েন  চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। পণ্যবাহী রেলের ওয়াগন, পণ্যবাহী ট্রাক ও জ্বালানি তেলবাহী লরি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার সময়ও নিরাপত্তা চাহিদা দেওয়া হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে।

সর্বশেষ খবর