শনিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাদশাহ আবদুল্লাহর ইন্তেকাল

নতুন বাদশাহ সালমান, আজ বাংলাদেশে শোক, সৌদি যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

বাদশাহ আবদুল্লাহর ইন্তেকাল
সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। কিছু দিন আগে নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের প্রদাহ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বাদশাহ আবদুল্লাহ গতকাল ভোরে ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সম্পন্ন হয়েছে তার দাফন। তার স্থানে নতুন বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আবদুল্লাহর সৎভাই ও সাবেক ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। এদিকে বাংলাদেশের বন্ধু বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শোক ও সমবেদনা জানাতে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিশ্ব নেতাদের বড় একটি অংশ। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও আজ সকালে রিয়াদের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। ২০০৫ সালে সাবেক বাদশাহ ফাহাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসীন হওয়া বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যু সংবাদ গতকাল প্রচার করা হয় সৌদি রাজসভার বিবৃতি ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ঘোষণার মাধ্যমে। সৌদি রাজসভার বিবৃতিতে বলা হয়, মৃত্যুকালে বাদশাহ আবদুল্লাহর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। নিউমোনিয়াজনিত সমস্যায় তিনি ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এত দিন নলের মাধ্যমে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। গতকাল বাদ আসর বাদশাহ আবদুল্লাহর মরদেহ দাফনের খবর জানিয়ে সৌদি রাজসভার বিবৃতিতে ৭৯ বছর বয়সী নতুন বাদশাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য রাজপ্রাসাদে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন সৌদি রাজপ্রাসাদের এক কর্মকর্তা। ঘোষণার আগে টেলিভিশনে কোরআন থেকে পাঠ করা হয়। সৌদি আরবে এই রীতি অর্থই হলো রাজপরিবারের কারোর মৃত্যুর খবর। ঘোষণায় রাজ কর্মকর্তা বলেন, সৌদি সময় শুক্রবার রাত ১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কাছাকাছি সময়ে তিনি বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার অসুস্থতায় এত দিন দায়িত্ব পালন করতে থাকা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের নতুন বাদশাহর দায়িত্ব গ্রহণের কথাও জানানো হয় ঘোষণায়। এদিকে, বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সৌদি আরবসহ সারা বিশ্ব শোকাচ্ছন্ন ছিল। কারণ সৌদি আরবের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে দেশের অভ্যন্তরে জনপ্রিয় ছিলেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। গোটা মধ্যপ্রাচ্য টালমাটাল অবস্থায় থাকলেও তার কঠোর নিরাপত্তা নীতির কারণে সৌদি আরবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তার আরও কৃতিত্ব ছিল ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ভেঙে মেয়েদের ভোটাধিকার দেওয়া। অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্ব বাদশাহ আবদুল্লাহকে মনে করে সৌদি আরবের সংস্কারের পথিকৃৎ।  বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সৌদি আরবে পাঠানো রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এক বার্তায় বলেন, তার মৃত্যু সৌদি আরবের রাজপরিবার, মুসলিম উম্মাহ ও পুরো বিশ্বের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশিদের প্রতি বাদশাহর ‘সদয় আচরণের’ কথা স্মরণ করেন এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন শুভাকাক্সক্ষী হারিয়েছে। প্রয়াত বাদশাহর আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি সৌদি রাজপরিবার ও তার দেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, সৌদি বাদশাহর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন অকৃত্রিম বন্ধু হারাল। বেগম জিয়া মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসহাক প্রমুখ। সৌদি যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি, কাল রাষ্ট্রীয় শোক : সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুতে আজ শনিবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছাড়া শোক জানাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ সৌদি আরব যাচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল বিকালে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, শোক পালনের অংশ হিসেবে আজ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ ছাড়া তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজায় বিশ্ব নেতারা : বাদশাহ আবদুল্লাহর দাফন গতকাল সন্ধ্যায়  হয়েছে। অত্যন্ত সাদাসিদেভাবেই এ দাফন সম্পন্ন হয়। রিয়াদের রাজকীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এ কবরস্থানে আবদুল্লাহর পরিবারের অনেক সদস্য শায়িত আছেন। একটি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে করে বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃতদেহ ইমাম তুরকি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃতদেহটি কবরস্থানে নিয়ে যান। জানাজায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশির এবং মিসরের প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম মেহলেব, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, কুয়েতের আমির শেখ শাবাব আল আহমেদ আল শাবাব অংশ নেন। বিশ্বনেতাদের শোক : বাদশা আবদুল্লাহর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক শোকবার্তায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার এক সত্যিকারের বন্ধুকে হারাল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিন আবদুল্লাহকে সত্যিকারের রাজনীতিবিদ আখ্যায়িত করে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জ্ঞাপন করেছেন, ব্রিটিশ প্রিন্স চার্লস, প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওঁলাদে, জার্মানির চ্যান্সেলর আনজেলা মার্কেল, তিউনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ ইসেবসি, জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টেফেন হারপার প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর