বৃহস্পতিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজপথে শোডাউনের চিন্তা বিএনপির

রাজপথে শোডাউনের চিন্তা বিএনপির

অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যেই ঢাকাসহ সারা দেশে রাজপথে নামার চিন্তা করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। অবরোধ-হরতাল কার্যকর করতেই দলের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে ভাবছেন। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির পর যে কোনো দিন ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে শোডাউন করা হতে পারে। সেই সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই আবারও সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাংবাদিকদের গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া না হলে খালেদা জিয়ার নামে লিখিত বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠানো হবে। সূত্র জানায়, গ্রহণযোগ্য নতুন একটি নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ‘ডু অর ডাই’ হিসেবে নিয়েছে ২০ দল। দাবি আদায়ে এবার সরকারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা। তাই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতেই রাজধানীসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ উত্তপ্ত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। খালেদা জিয়া এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। তাই আমরা চাই, সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। সেই দাবিতেই আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কৌশল পরিবর্তন করা হবে। এ ধরনের চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে।’ সূত্রমতে, বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের বিষয়ে পরিষ্কার করবেন দল ও জোটের অবস্থান। নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিতে পারেন এতে। সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করতে না দেওয়া হলে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হবে।
ঢাকা মহানগরের কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলেন, রাজধানীতে শোডাউনের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে ঢাকায় অবরোধ-হরতালের মধ্যেই বিপুল লোক সমাগম করা হবে। এবার ঢাকার আন্দোলন সফল না হলে দায়িত্ব পাওয়া দলের হেভিওয়েট নেতারাও বিপদে পড়বেন বলে জানান তারা। জানা যায়, তৃণমূলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ বার্তা ইতিমধ্যে পৌঁছানো হয়েছে। পৃথকভাবে তারেক রহমানও তাদের বার্তা পাঠিয়েছেন। নির্দেশনা রয়েছে, আন্দোলনে গতি আনতে আগামী সপ্তাহ থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ উত্তপ্ত করে তুলতে হবে। ব্যাপকভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই সভা-সমাবেশ করতে হবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতার মতে, ‘পুলিশের বা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয় না।’ দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিরোধী দলকে নিয়ে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করতে সংস্থাটির সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন। সরকার সংলাপ-সমঝোতায় এগিয়ে এলে বিএনপিও সাড়া দেবে। কিন্তু সরকার উৎসাহ না দেখালে আন্দোলনেই দাবি আদায় করা হবে। এদিকে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংকট নিরসনে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সব মিলে চলতি মাসের এই শেষ দুটি সপ্তাহকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ বলে ভাবছেন বিএনপি জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতার মন্তব্য, এবার আন্দোলনে সফলতা না এলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। দলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তাই নানা বাধা সত্ত্বেও আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে। আর ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত করতে পারলে খালেদা জিয়াও গুলশানের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে গণজমায়েতে যোগ দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর