রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

হিটলিস্টের চার-এ ছিল অভিজিৎ

তদন্ত সহায়তায় এফবিআইয়ের আগ্রহ, মামলা ডিবিতে

হিটলিস্টের চার-এ ছিল অভিজিৎ

‘অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত শুক্রবার রাতে এফবিআইর পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আজ (শনিবার) বাংলাদেশস্থ ইউএস অ্যাম্বেসির তিনজন লোক আমার বাসায় এসেছিলেন।’ গতকাল সিদ্ধেশ্বরীর নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এসব কথা বলেন নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়।
মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রগতিশীল লেখক ড. অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনা তদন্তে দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সকালেই মামলার তদন্তভার ডিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, মামলার তদন্ত করার জন্য ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে এফবিআইর কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিদর্শক ফজলুর রহমানকে।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ওই সময় গ্রেফতার হওয়া নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের কাছ থেকে আটজনের একটি হিটলিস্ট উদ্ধার করা হয়। ওই হিটলিস্টের চার নম্বরে ছিল অভিজিতের নাম। জঙ্গিগোষ্ঠী এবিটির দিকে সন্দেহের চোখ রেখেই তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় স্থাপিত ৭০টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। কারণ অভিজিৎ এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা মেলায় প্রবেশের পর থেকেই বিভিন্ন স্টলে ঘোরাঘুরি করেছিলেন। ওই সময়ের মধ্যে কেউ তাদের অনুসরণ করেছিল কিনা এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন, অভিজিৎকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে অভিজিৎ যখন মেলায় প্রবেশ করেছেন তখন থেকেই খুনিরা তার ওপর নজরদারি শুরু করে। মেলায় তারা যেখানে যেখানে ঘুরেছেন খুনিরা তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে থাকতে পারে। পরে মেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর সুবিধামতো তারা হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, খুনিদের একজনের গায়ে সাদা শার্ট ও অপর একজনের গায়ে কালো কোট জাতীয় কিছু ছিল। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ফুটেজে অভিজিৎকে শনাক্ত করে তার পিছু নেওয়া লোকজনের মধ্যে খুনিদের কেউ ছিল কিনা তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ডিবির অপর একজন কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের খুনের দায় স্বীকার করেছে এবিটির একটি দল। তিনি আরও জানান, এবিটির সদস্যরা উচ্চ শিক্ষিত। হয়তো এমন হতে পারে যারা সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছিল তারা বইমেলায় না ঢুকে বাইরে অবস্থান করছিল। রেকি করেছে তাদের অপর সদস্যরা। ঘটনাস্থলে তাদের আরও অন্তত ৫-৭ জন সদস্য উপস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজীবকে হত্যার আগে কয়েক দফা রেকি করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতরা একেকজন একেক দায়িত্ব পালন করেছে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও খুনিরা একাধিক দিন রেকি করে থাকতে পারে। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল সকালে বাংলাদেশস্থ ইউএস অ্যাম্বেসির ফ্রাঙ্ক, গিবসন ও ইতির সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিহত অভিজিতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে যান। এ সময় তারা মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। এ ব্যাপারে নিহতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, আমি তাদের বলেছি, এ দেশের র‌্যাব-পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তবে আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, পুলিশের কাছে উগ্রপন্থিদের তালিকা রয়েছে। তারা চাইলেই তাদের গ্রেফতার করতে পারে। তবুও আমি পুলিশের ওপর আস্থা রাখছি। অজয় রায় জানান, ঘটনার পরপরই অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তাকে ফোন করে হুমকি দেয়। ছেলের মতো তাকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
বইয়ের প্রকাশককে হত্যার হুমকি : এবার হত্যার হুমকি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্লগার নিহত ড. অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক। বিভিন্ন ফেসবুক পেজে হত্যার হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বর-এর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুুর রহমান জানান, গতকাল আহমেদুর রশীদ টুটুল সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। সকালে ফেসবুকের একটি লিংকে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, তিনি যে লিংকটির কথা বলেছেন, তা বন্ধ আছে। তবে কারা সেই লিংক ব্যবহার করেছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এদিকে টুটুল বলেন, ‘আমাকে হত্যা করা উচিত- এমন দাবি করে কয়েকটি ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। আমি ঘটনার প্রতিকার ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জিডি করেছি।’

সর্বশেষ খবর