রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
রকিবুল হাসানের কলাম

অবাক করল দুই দলই

অবাক করল দুই দলই

টান টান উত্তেজনার মধ্যদিয়ে শেষ হলো বহুল আলোচিত অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। ১৫২ রানের সাদামাঠা টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র এক উইকেটে ম্যাচ জিতিছে নিউজিল্যান্ড। দুই দলেরই ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো, মাঝ পথে ছন্দ হারিয়ে ফেলা। ফলাফল-কম রানের এক লড়াই। উভয় দলের বোলারদের অসাধারণ কৃতিত্ব এবং ব্যাটসম্যানদের কিছুটা দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের কারণেই গতকাল বড় রানের ম্যাচ দেখা সম্ভব হয়নি অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক মাঠে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে অতীব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ছক্কা মেরে এক উইকেটে এক নাটকীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেন ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্তের পর স্কোর বোর্ডে যখন এক উইকেটের বিনিময়ে ৮০ রান, তখন সবার ধারণা ছিল দেখতে পাবে ৩০০ বা তদূর্ধ্ব রানের এক টার্গেট এবং বড় রানের এক উপভোগ্য ম্যাচ। গণ্ডগোলটা এর পরই। মাত্র ২৬ রানে ৮ উইকেটের পতন! শেষ জুটিতে হাডিনের ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই কিছুটা সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করাতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া। ৩৩ ওভারের মধ্যেই অলআউট! বড়ই লজ্জা অসিদের জন্য। ব্ল্যাক ক্যাপসদের বাঁ হাতি দুই বোলার পেসার ট্রেন্ট বোল্ট এবং স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টরিই লাগাম টেনে ধরেছিলেন অসি ব্যাটসম্যানদের। ম্যাচসেরা বোল্টের ২৭ রানে ৫ উইকেট সবচেয়ে বড় আঘাত হানে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাম্পে। এক পর্যায়ে নার্ভাস লাগছিল অসি ব্যাটসম্যানদের। কার্যত, মাত্র তিন বোলার দিয়েই কাজটা সারলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ম্যাককালাম। নির্ধারিত বিরতির কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে অলআউট হলে নিয়মানুযায়ী ১০ মিনিটের বিরতির পর টার্গেট তাড়া করতে এসে অধিনায়ক ম্যাককালাম এর নেতৃত্বে এক উড়ন্ত ইনিংসের সূচনা ব্ল্যাক ক্যাপসদের। মাত্র ২৪ বলে ৫০ রান অধিনায়কের। উদ্বোধনী জুটিতে ৪০ রানই ইঙ্গিত দিচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের এক সহজ জয়ের। আর এ পর্যায়েই জ্বলে উঠতে থাকে অসি বোলাররা। অসাধারণ ফাস্ট বোলিংয়ের এক নিদর্শন দেখল মাঠের এবং টিভির সামনে বসা লাখ লাখ ক্রিকেটমোদী দর্শকরা। এ অবস্থা থেকেই বল হাতে বাঁ হাতি অসি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক গর্জে উঠলেন। প্রথমত, বিরতির আগের ওভারে টেইলরকে বোল্ড করা দিয়ে শুরু এবং পরবর্তিতে নিয়মিত বিরতিতে এবং বিশেষ করে তার শেষ দুই ওভারে অর্থাৎ নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শেষ পর্যায়ে আরও পাঁচ পাঁচটি উইকেট তুলে নিলে তৈরি হয়ে যায় এক নাটকীয় মুহূর্ত। এক পর্যায়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ৬ রান। হাতে মাত্র একটি উইকেট, উইকেটে তখন একমাত্র নির্ভরশীল ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন। ভাগ্য ভালো ব্ল্যাক ক্যাপসদের। স্ট্রাইক পেলেন উইলিয়ামসন। সম্ভবত বুঝেছিলেন তাকেই শেষ করতে হবে সব হিসাব-নিকাশ। ভরসা পাচ্ছিলেন না শেষ পার্টনারের ওপর। করলেনও তাই। প্রথম বলেই লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে মাঠের সব টেনশন এবং নীরবতা ভঙ্গ করে স্বাগতিক দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে দিলেন। ‘তাসমান’ সাগরের এপাড় এবং ওপাড়ের এই দুই দেশের মধ্যে ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারত-পাকিস্তান কিংবা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো না হলেও রেশারেশিটা ভালোই চলে। জানি না, এ কারণেই কি না এত অল্প রানের টার্গেটকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে অসিরা এত মরিয়া হয়েছিল। অনেকের মানসপটেই হয়তবা ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের এ দুই দলের মধ্যকার সেমিফাইনালে উঠার ম্যাচের চিত্র ফুটে উঠেছিল। ওই ম্যাচে জিতে ভালো অবস্থানে থেকেও শেষের দিকে ব্যাটিং ধসে ব্ল্যাক ক্যাপসরা মাত্র ৩ রানে হেরেছিল।

সর্বশেষ খবর