মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
জড়াচ্ছেন অপরাধমূলক কার্যকলাপে

বাংলাদেশে অবৈধ বাণিজ্য বেড়েছে পাকিস্তানিদের

বাংলাদেশে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে পাকিস্তানি নাগরিকদের। তাদের এসব ব্যবসা বা কারবারের স্বপক্ষে কোনো ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, আয়কর সনদপত্র ও বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদনপত্র নেই। জানা গেছে, এসব অবৈধ কারবারের নানা কিছু হাতেনাতেও ধরছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। গোপনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসা এই পাকিস্তানিরা ঢাকায় ব্যবসার অন্তরালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত) সুলতান মো. ইকবাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে অবৈধভাবে ব্যবসা করে আসা পাকিস্তানি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ব্যাপক পণ্য আটক করেছি। আগামী দিনগুলোতেও এমন অবৈধ ব্যবসায়ীদের ধরতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা সর্বোচ্চ সক্রিয় রয়েছেন।’ এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রকারের পাকিস্তানি পণ্য আমদানি অধিক পরিমাণে বেড়েছে। কাস্টমস হাউসগুলোর নজরদারি এড়িয়ে পাকিস্তানি পণ্য সামগ্রী ঢুকছে বাংলাদেশে। এমনকি রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে ফ্ল্যাটে বসেই পাকিস্তানি চোরাকারবারিরা এসব পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করছে দেশের আনাচে-কানাচে। ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে চোরাকারবারিদের অপতৎপরতায় শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে পাকিস্তানে। এদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চোরাকারবারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল হালিম পুরী’র গুলশানের ফ্ল্যাটে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার সর্বশেষ তথ্য সংবলিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদন এনবিআরে প্রেরণ করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে এনবিআর সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশানের ৬৩ নম্বর রোডের ৩৪ নম্বর বাড়ির ২/এ, ফ্ল্যাট ব্যবহার করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে বিপণন ব্যবসা করে আসছেন পাকিস্তানি নাগরিক আবদুল হালিম পুরী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের (ডিবি) সহায়তায় গতবছর ২৮ সেপ্টেম্বর ওই ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে শুল্ক গোয়েন্দার একটি বিশেষ টিম। অভিযানে বিপুল পরিমাণে অতি উন্নত মানের বস্ত্র (থ্রিপিস, টুপিস ও শাড়ি) আটক করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে অতি উন্নত মানের ৩ হাজার ৭৪টি থ্রিপিস সেট (আনস্টিচড), ১৩৭টি থ্রিপিস সেট (স্টিচড) ও ৭১টি সিনথেটিক শাড়ি। এসব পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। ওই ফ্ল্যাটে শুল্ক গোয়েন্দাদের তল্লাশির সময় পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল হালিম পুরী তার ব্যবসার স্বপক্ষে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কোনো ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, আয়কর সনদপত্র ও বিনিয়োগ বোর্ডের কোনো অনুমোদন পত্র দেখাতে পারেননি। এসব দলিলাদি না থাকলে কোনো ব্যক্তি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে পারেন না।
এনবিআর সূত্র আরও জানায়, শুল্ক গোয়েন্দাদের এই অভিযান চলাকালের একপর্যায়ে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার আহমদ হোসেন ডাইও সশরীরে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে উদ্ধার করা পণ্যগুলো ছেড়ে দিতে বলেন। তখন বিষয়টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে উত্থাপন করবেন বলেও শুল্ক গোয়েন্দাদের জানান এই ওই কূটনীতিক। এমন প্রেক্ষাপটে ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অব প্রটোকল নাজমুল ইসলামের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নজরে আনা হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এভাবে আরও অনেকে ব্যবসার নামে অবৈধ কারবার করে চলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআর নজরদারি চালাচ্ছে বলেও জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর