মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমাকে খুন না করে যেন উনি থামবেন না : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের চলমান টানা অবরোধ ও হরতালের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘উনি তো দেখছি হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন, ছাড়বেন না বলে মনে হচ্ছে। যেন আমাকে খুন না করা পর্যন্ত উনি থামবেন না।’ গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন বলে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড এবং চট্টগ্রামে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া অস্ত্র প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। এদিকে বৈঠকে বিদ্রোহের যথোপযুক্ত শাস্তির বিধান রেখে ব্যাটালিয়ন আনসার সংশোধন আইন, ২০১৫-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের বিয়ের বিধান রেখে গণকর্মচারী (বিদেশিদের সাথে বিবাহ আইন) ২০১৫ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সরাসরি সংসদে উত্থাপন হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে চলমান অবরোধ ও হরতাল প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, হরতাল ও অবরোধের প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে অংশ নেন এবং বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) তো দেখছি এগুলো চালিয়ে যাবেন। ছাড়বেন বলে মনে হচ্ছে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাকে খুন না করা পর্যন্ত উনি থামবেন না।’ বৈঠকে ব্লগার ও মুক্তচিন্তার লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড নিয়েও মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা আলোচনা করেন। একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় অন্যরাও এতে অংশ নেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি এলাকায় কীভাবে এরকম একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাও আবার বইমেলা চলাকালে। অভিজিতের ঘটনা উল্লেখ করে একাধিক মন্ত্রী বলেন, আগামীতে এর চেয়েও বড় ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে সন্ত্রাসীদের। তারা দেশকে অস্থির করে তুলতে চায়।
অন্য একজন মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা নিয়েও বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। দেশে নাশকতা করতেই এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক আনার চেষ্টা হতে পারে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। এজন্য বৈঠক থেকে চট্টগ্রাম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে ওই মন্ত্রী জানান। এ ছাড়া সবাইকে আরও সতর্ক থাকতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, বৈঠকে ব্যাটালিয়ন আনসার সংশোধন আইন, ২০১৫-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এটি করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে। আগে আনসার বিদ্রোহের জন্য শাস্তির কোনো বিধান ছিল না।
সচিব জানান, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে- অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা আগে নয় বছর চাকরি করলে তাদের চাকরি স্থায়ী হতো। নতুন আইনে তা ছয় বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে সর্বোচ্চ শাস্তি বরখাস্ত করা এবং দ্বিতীয়টা হলো অপসারণ। বাধ্যতামূলক অবসরের বিষয়টি বিধানে ছিল না এবং আরও কয়েকটি মধ্যম ধরনের শাস্তি ছিল না, যা এই সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছ। সংশোধিত আইনে বাধ্যতামূলক অবসর, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিত, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, অবহেলার কারণে আর্থিক ক্ষতি হলে আনুতোষিক থেকে কেটে নেওয়ার বিধান যুক্ত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলাভঙ্গে যে যে শাস্তি দেওয়া যায়, তার সবকিছু এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বৈঠকে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আইন-২০১৫ খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ আইনে করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ১ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে এ প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন পাঁচজন পরিচালক ছিলেন। এখন তা ৬০ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠকে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার সামাজিক উন্নয়ন তহবিল গঠন ও পরিচালনা নীতি-২০১৫ খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর