রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

আজ জিতলেই সিরিজ টাইগারদের

আজ জিতলেই সিরিজ টাইগারদের

সবাইকে হারিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছে। হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তিকেও। শুধু পারছিল না পাকিস্তানের সঙ্গে। ১৬ বছর হারাতে না পারার এই বেদনা ও কষ্টকে সঙ্গী করে পথ হেঁটেছে বাংলাদেশ। হেঁটেছে আর দূর নীলিমায় তাকিয়ে খুঁজে বেরিয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে না পারার কারণ। কিন্তু কোনোভাবেই মেলাতে পারেনি হিসাব। খুঁজেও বের করতে পারেনি না পারার কোনো উত্তর। অবশেষে ১৭ এপ্রিল দেখা পেল সেই বহু আরাধ্য উত্তরের। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মেলালো ‘পাকিস্তানকে না হারানোর’ রহস্যময় জটিল অঙ্ক। ঘোচালো ১৬ বছর বুকে বয়ে বেড়ানোর আক্ষেপ। শুক্রবারের ৭৯ রানের ঐতিহাসিক জয় সব হতাশাকে ছুড়ে ফেলে শুধু বন্ধ্যত্বই ঘোচায়নি, উন্মুক্ত করে দিয়েছে সিরিজ জয়ের রাস্তা। আজ সেই উৎসবের বর্ণিল হাতছানি। ফের যদি অঙ্ক মেলাতে পারে, তাহলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আবার ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি মেতে উঠবে আনন্দে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের পর পাকিস্তানকে সিরিজ হারিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নিবেন মাশরাফিরা। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে আত্মবিশ্বাসটাকে গগনে উঠিয়ে নিয়েছেন মাশরাফিরা। অধরা পাকিস্তানের বিপক্ষে গগনচুম্বী আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা শুক্রবার দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেছে একই তালে। টাইগারদের এই আত্মবিশ্বাসী পথ চলায় কোনো লড়াই করতে পারেনি পাকিস্তান। অঙ্ক মেলাতে যা কিছু দরকার ছিল, শুক্রবার দিনের শুরুতে সব মিলিয়েছে টাইগাররা। প্রথমবারের মতো জোড়া সেঞ্চুরি। নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এবং তৃতীয় উইকেট জুটিতে রেকর্ড। সবই ছিল শুক্রবার। ছিল বলেই ৩২৯ রানের রেকর্ড রান, ২৩ মাস পর তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি এবং ‘আস্থার প্রতীক’ হয়ে উঠা মুশফিকুর রহিম ফের সেঞ্চুরি করেন। এমন টিম ওয়ার্ক যখন মিরপুরে, তখন পাকিস্তানকে না হারানোর কোনো কারণও ছিল না। তামিম-মুশফিকের দেখানো পথে হেঁটে তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানিরা দুমড়ে মুচড়ে দেন ইউনিস খান, শহীদ আফ্র্রিদি, মিসবাহ উল হক, উমর আকমলবিহীন পাকিস্তানকে। ৪০০ রান তাড়া করে যেখানে ম্যাচ জিতে নিচ্ছে দলগুলো, সেখানে টাইগারদের ছুড়ে দেওয়া ৩৩০ রানের টার্গেট, এক অর্থে মামুলিই বলা যায়! কিন্তু যে দলে আফ্রিদি, ইউনিসদের মতো ম্যাচ উইনার নেই, সেই দলের জন্য এই রান তাড়া করে জেতা মাস্ক ছাড়া পর্বত ডিঙানোর মতোই! হয়েছেও তাই। তাসকিনের গতি, সুইং এবং আরাফাতের ঘূর্ণিতে ২৫০ রানেই ঘুটিয়ে যায় পাকিস্তান। আর তাতেই দীর্ঘ ১৬ বছরের বন্ধ্যত্ব ঘুঁচে বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসে এখন টুইটুম্বুর টাইগাররা। নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রথম ম্যাচ খেলতে পারেননি মাশরাফি। সাজঘরে বসে দেখেন দলের অসামান্য কীর্তি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ ফিরছেন মাশরাফি। তুলে নিচ্ছেন দায়িত্ব। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে উপহার দিতে চান সিরিজ, ‘দারুণ একটি সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শুক্রবার ম্যাচ জেতার জন্য যা যা দরকার ছিল, সবই হয়েছে। কোথাও কোনো ত্র“টি ছিল না। যাকে বলে পারফেক্ট। জিতলেও আমার মনে হয় বোলিং আর একটু ভালো হতে পারত। এমন উইকেটে যে কোনো দল ৩০০ রান করতে পারে। আমরা যে রকম খেলেছি, সে রকম খেলতে পারলে যে কোনো সময় যে কোনো দলকে হারানো সম্ভব। ইনশাল্লাহ আগামী ম্যাচে যদি ভুলত্র“টিগুলো কম করি, তাহলে ম্যাচ জিতে সিরিজ জেতা সম্ভব।’ মাশরাফি ফিরছেন। তাই বসে থাকতে হবে আবুল হাসান রাজুকে। আজ এই একটি পরিবর্তন নিয়েই লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। এখন শুধু সিরিজ জয়ের অপেক্ষা। আবার উৎসবে হাতছানি। 

সর্বশেষ খবর