রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রচারে নতুন কৌশল মেয়র প্রার্থীদের

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রচার-প্রচারণা ততই জমে উঠছে। কারা মেয়র হচ্ছেন, তা নিয়ে এখন তুমুল কৌতূহল সাধারণ মানুষের মধ্যে। ভোটারদের মনোযোগ কাড়তে প্রার্থীরাও প্রচারে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। নতুনত্ব এসেছে স্লোগান ও ইশতেহারে। মেয়রদের পাশাপাশি নতুন কৌশলে ঝুঁকেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।
মেয়র প্রার্থীরা এবার সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। তরুণ ভোটারদের টানতে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেদের উপস্থাপন করছেন। নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, মোবাইল ফোনে চলছে ডিজিটাল প্রচারণা। শুধু লেখা বার্তা নয়, ভিডিওচিত্রের মাধ্যমেও চাওয়া হচ্ছে ভোট। কেউ বা বানিয়েছেন গান। প্রায় সবাই প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বাইরে গ্রহণযোগ্য ও সৃজনশীল মানুষকে পাশে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে দক্ষিণের চেয়ে উত্তরেই কৌশলী প্রচারের লড়াই বেশি। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ‘আমরা ঢাকা’ ও বিএনপির তাবিথ আউয়াল ‘নতুন প্রজন্ম-নতুন ঢাকা’ স্লোগান সামনে রেখে প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, মাহী বি চৌধুরীর ‘প্রজন্ম শহর’, জোনায়েদ সাকির ‘আগামীর ঢাকা সবাই মিলে’ ও আবদুল্লাহ আল ক্বাফির ‘বাসযোগ্য ঢাকা’ স্লোগান। প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন সেগুলো ভোটারদের কাছে নিজেরা করেও দেখাচ্ছেন। কেউ কেউ ঝাড়ু হাতে নেমে পড়ছেন। আবার কেউ বৈশাখের অনুষ্ঠানে পলিথিন নিয়ে ঘুরে বেরিয়ে প্রচারণায় এনেছেন ভিন্ন মাত্রা। লাল সবুজ গেঞ্জি পরেও চলছে প্রচার। দূষণমুক্ত নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতিতে সাইকেল র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন মেয়র প্রার্থী।
প্রচার-প্রচারণার এই নতুন মাত্রায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে উত্তর সিটির আনিসুল হক। তিনি শুরু থেকেই নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। তারকাদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার, তরুণ সাইক্লিস্ট দলের সঙ্গে সাইকেল চালানো, গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া, মিডিয়া হাউস পরিদর্শন, সেলফি তোলা এবং তা ফেসবুকে শেয়ার করছেন। পত্রিকা ও টেলিভিশন কাভারেজেও তিনি এগিয়ে। প্রচারণায় তার সঙ্গে থাকছেন স্ত্রী রুবানা হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি, অভিনেত্রী তারানা হালিম এমপি এবং তরুণ বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত ও স্মার্ট স্বেচ্ছাসেবী। নারী ভোটারদের আকর্ষণে মহিলা কর্মী দিয়ে রিকশাযোগে মাইকিংও করাচ্ছেন। তারকাদের নিয়ে গতকাল পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন আনিসুল হক। গুলশান শুটিং কমপ্লেক্সের সামনে এই প্রতীকী কর্মসূচি দৃষ্টি কাড়ে স্থানীয়দের। উপস্থিতি ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করে তুলতে হাতে ঝাড়ু তুলে নেন আনিসুল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দেন। তার সঙ্গে অংশ নেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা। আনিসুলের পক্ষে ভোট চান এ টি এম শামসুজ্জামান, রামেন্দু মজুমদার, তারানা হালিম, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শর্মিলী আহমেদ, তমালিকা কর্মকার, শহিদুল আলম সাচ্চুসহ অনেকে। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল তার পক্ষে প্রচারে অংশ নেন। তাবিথ আউয়াল এ ছাড়াও গাবতলীর বড়বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। তার সঙ্গে এ সময় ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ ২০ দলের নেতা-কর্মীরা। মাহী বি চৌধুরী প্রজন্ম শহর গড়ার অঙ্গীকার করে নানা কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঝাড়ু প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে তাকেও। এ ছাড়া তিনি ভিডিও গান ছেড়েছেন। অর্থনৈতিক সক্ষমতা কম দাবি করে আরেক প্রার্থী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের কাছে টাকা নেই, তাতে কী, সৃজনশীল বন্ধু আছে তো। আর তা দিয়েই প্রচারণা চলছে।’ উত্তরার জসীমউদ্দীন রোড মোড়ে চা দোকানি ইমরান বলেন, ‘আমাদের ভোট নিতে প্রার্থীরা যে কত কৌশলী হচ্ছেন তা বলা মুশকিল। এখন মোবাইল ফোন, ফেসবুক দেখলেই জানা যায়, কে কোথায় প্রচারণা করছেন।’
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার নতুন ভোটার কলেজছাত্র ইয়াসিন বলেন, ‘জীবনে প্রথম সিটি নির্বাচনে ভোট দেব। ভালো লাগছে। মেয়র-কাউন্সিলর পদে কাকে ভোট দেব এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। অনলাইনে প্রার্থীদের নানা অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি চোখে পড়েছে। দেখা যাক।’
আবদুল্লাহ আল ক্বাফি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুব একটা ব্যবহার করছেন না। তবে তিনি সমসাময়িক ঘটনাই প্রচারণায় কাজে লাগাচ্ছেন। নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দোষীদের ধরতে আলটিমেটাম দেন। পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থানেরও ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ খবর