বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-ভারত নৌ ট্রানজিট রুট

মংলা-ঘষিয়াখালী ড্রেজিং শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ

বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ চলাচলে ট্রানজিট রুট হিসেবে পরিচিত মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ড্রেজিং সম্পন্ন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যত দ্রুত সম্ভব ড্রেজিং সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক এই নৌরুটটি সারা বছর চালু রাখার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদীকে নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার গণভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের নির্দেশনা দেন।
সূত্র জানায়, গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলের জন্য নির্মিত দুটি অত্যাধুনিক জাহাজ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌ সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ওই নৌরুটটির ড্রেজিং শেষ না হওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিষয়টি স্বীকার করে নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এবার তিনি নৌরুটে বার্জ চলাচল নির্বিঘœ করতে সারা বছর এর নাব্য ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রয়োজনে চিংড়ি ঘের বন্ধ করে দিয়ে সব সংযোগ খালের মুখ খুলে দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান সচিব। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌপথে ট্রানজিটের জন্য যে প্রটোকল সই হয়েছে তার অন্যতম রুট হচ্ছে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল। এ ছাড়া সুন্দরবনের বিকল্প পথ হিসেবেও এই পথটি ব্যবহার হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, মংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের দূরত্ব কমানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার পথ খনন করে ৩১ কি.মি. দীর্ঘ ‘মংলা-ঘষিয়াখালী’ নৌপথটি চালু করা হয়। এটি ‘বাংলাদেশ-ভারত’ নৌ-প্রটোকলভুক্ত ও বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট পথের একটি প্রধান অংশ। চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, উত্তরাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চল থেকে খুলনা, নোয়াপাড়া, আংটিহারা হয়ে ভারতগামী পণ্যবাহী সব জাহাজ এ নৌপথ দিয়ে চলাচল করে থাকে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মংলা বন্দর বন্ধ করে দেয়। ফলে ঘাষিয়া খালটির আর কোনো গুরুত্বও ছিল না। যার জন্য দীর্ঘদিন এটা ড্রেজিং হয়নি। নাব্য সংকটের কারণে ২০১০ সাল থেকে এ নৌপথে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। নৌরুটটি বন্ধ থাকার ফলে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে ১১০ কি.মি. ঘুরে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে একদিকে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় ও ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়ে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে এর তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের খালগুলোতে। এ অবস্থায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ঘাষিয়া খালটি পুনরায় খনন করতে হবে। একই সঙ্গে ঘের দিয়ে বন্ধ থাকা শাখা খালগুলোর মুখ খুলে দিতে হবে। একটা সার্ভে করে দেখতে হবে কোন কোন এলাকায় এই চিংড়ি ঘের করার কারণে খালে পানি আসাটা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘেরগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। তাতে যারাই ঘের করুক তা সরিয়ে দিতে হবে। পানি আসার পথ চালু রাখতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সরেজমিন ড্রেজিং কার্যক্রম পরিদর্শন করে জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক ওই নৌরুটের খনন কাজ সম্পন্ন করার ঘোষণা দেন। গত মে মাস থেকে এই রুটটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও এর ড্রেজিং এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় পুর্ণাঙ্গভাবে নৌরুটটি চালু হতে পারছে না। সূত্র জানায়, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলকে সচল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর একটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ, যারা ঘষিয়াখালী-রামপাল অংশে কাজ করছে। আর অন্য অংশটির ড্রেজিং কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অপারেশন্স) আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এখনো পর্যন্ত মংলা-ঘাষিয়াখালী রুটে ৭০ ভাগ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। এতে কোনো ধরনের জাহাজ চলতে পারে না। ছোট ছোট বার্জ চলতে পারে, যেগুলোর ক্ষমতা মাত্র দুই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন।

সর্বশেষ খবর