বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

মামলা কমছে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। দুই ট্রাইব্যুনালে এখন মাত্র ছয়টি মামলা। এর মধ্যে বিচারের পর্যায়ে আছে মাত্র একটি মামলা। এটির কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। বিচার শেষে রায়ের অপেক্ষায় আছে দুটি মামলা। আজ এর একটির রায় ঘোষণার কথা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, গত কয়েক বছরে বেশকিছু মামলার নিষ্পত্তির পর সেই হারে নতুন মামলা না আসায় এ ‘সংকট’ সৃষ্টি হয়েছে। প্রসিকিউশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সব প্রক্রিয়া শেষে ঈদের পরই আরও কয়েকটি মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, ট্রাইব্যুনালে ছয়টি মামলা থাকলেও প্রসিকিউশনের কাছে আরও কিছু মামলা আছে। এগুলো পর্যালোচনা শেষে যতদ্রুত সম্ভব আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। তখন মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে। জানা গেছে, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। বিচারে গতি বাড়াতে ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য পরে গঠন করা হয় আরেকটি ট্রাইব্যুনাল। দুই ট্রাইব্যুনালে গত পাঁচ বছরে মানবতাবিরোধী অপরাধবিষয়ক ১৯ মামলায় ২১ জনের বিচার শেষ হয়েছে। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এ বিষয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এখন আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে প্রসিকিউশন থেকে কিছু মামলা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে শিগগিরই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। এ ছাড়া তদন্ত শেষ হওয়ার পর আরও কিছু মামলা প্রসিকিউশনে আসবে। এসব মামলাও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে প্রসিকিউশনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দুই ট্রাইব্যুনালে ছয় মামলায় এখন ৩৬ জনের বিচার চলছে। আসামিরা হচ্ছেন- নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী, হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আবদুর রাজ্জাক, কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন আহমেদ, মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। আরেকটি মামলায় কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধান। একটি মামলায় কক্সবাজারের ১৯ জন আসামি। এদের মধ্যে রয়েছেন সালামত উল্লাহ খান, মোহাম্মদ রশিদ মিয়া, জিন্নাত আলী, মৌলভী ওসমান গনি, নুরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া। এ মামলায় গ্রেফতার মো. শামসুদ্দোহা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্প্রতি মারা গেছেন। বাকিরা পলাতক। জামালপুরের মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ আবদুল বারী, মো. হারুন, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী। তাহের ও ননীর মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্য মামলাগুলো অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তর, নির্যাতন, অপহরণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে বিচার শেষে বাগেরহাটের সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আবদুল লতিফ তালুকদার ও খান মোহাম্মদ আকরাম হোসেনের মামলার রায় অপেক্ষমাণ। যে কোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের মামলার রায় আজ ঘোষণার কথা রয়েছে। তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলাটি পরিচালনা করছেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে এ মামলায় ১১তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ পাবে। এরপরই যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে যাবে। আশা করছি, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারব। দুই ট্রাইব্যুনালে বিচারে দণ্ডিতদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, দলটির বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আবদুস সুবহান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুল আলীম। একাত্তরের দুই আলবদর সদস্য চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মো. মোবারক হোসেন, এরশাদ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, পিরোজপুর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল জব্বার, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন, কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মোহাম্মদ হাছান আলী। এদের মধ্যে গোলাম আযম, আবদুল আলীম, আবদুল জব্বার, মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন ছাড়া সবাই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। গোলাম আযমকে ৯০ বছর এবং আবদুল আলীম, জব্বার, মাহিদুর ও আফসারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খোকন, জব্বার, আযাদ, হাছান, মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। গোলাম আযম ও আলীম দণ্ডভোগরত অবস্থায় মারা গেছেন।

সর্বশেষ খবর